কক্সবাজার সৈকতে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখলেন লাখো পর্যটক

  বিশেষ প্রতিনিধি    31-12-2022    196
কক্সবাজার সৈকতে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখলেন লাখো পর্যটক

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে এসেছেন লাখো পর্যটক। বছরের শেষ দিনে সমুদ্রসৈকতে সমবেত হয়েছিলেন তারা। পড়ন্ত বিকালে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। পর্যটকদের কোলাহল ও পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল চারদিক।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকালে লাল সূর্য যখন ধীরে ধীরে সমুদ্রের বুকে অস্তমিত হচ্ছিল, তখন সবাই মেতে ওঠেন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। হাত নেড়ে বিদায় জানান বছরের শেষ সূর্যকে। কেউ বাবা-মাকে নিয়ে আবার কেউ প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে গোসলে নেমেছেন সাগরের নোনাজলে। বছরের শেষ সূর্যাস্তকে স্মৃতিময় করে রাখতে কেউ মোবাইলে ও আবার কেউ ক্যামেরায় বন্দি করেছেন। লাখো মানুষের স্রোতে মিলনমেলায় রূপ নেয় সমুদ্রসৈকত।

বিকালে লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্রেসৈকতে স্নান ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতেছেন পর্যটকরা। কেউ টায়ার টিউবে গা ভাসাচ্ছেন, কেউ জেটস্কি নিয়ে সাগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, কেউবা আবার ঘোড়া ও বিচ বাইকে উঠে সৈকতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

অনেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে ঘুরেছেন। এছাড়া সেন্টমার্টিন, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ঘুরেছেন কেউ কেউ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে পর্যটন নগরীতে সমাগম ঘটেছে লাখো পর্যটকের। প্রতি বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আয়োজন করা হতো খ্যাতনামা শিল্পীদের অংশগ্রহণে ওপেন কনসার্টসহ নানা আয়োজন। এসব অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকতো সৈকতসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলো। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে নিরাপত্তার অজুহাতে উন্মুক্ত স্থানে কোনও ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন নেই। এতে থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে পর্যটকদের আগমনের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে পর্যটক ধারণক্ষমতা রয়েছে দুই লাখের বেশি। থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে প্রতি বছর হোটেল-মোটেলের ৯০ শতাংশ আগাম বুকিং হলেও এ বছর কিছুটা কম। এরপরও থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ইতোমধ্যে লাখো পর্যটক এসেছেন। তবে থার্টি ফার্স্টে উন্মুক্ত স্থানে কোনও আয়োজন না থাকলেও তারকামানের হোটেল-মোটেলগুলোতে সাজসজ্জার পাশাপাশি কনসার্ট, গালা ডিনার ও রুম বুকিংয়ে বিশেষ ছাড়াসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটকদের একটি বড় অংশ সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের জন্য আসেন। এ বছর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি না থাকায় পর্যটকের ভিড় তুলনামূলক কম।

হোটেল-মোটেলের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে তাদের হোটেল-মোটেলে স্পেশাল বুফে ডিনার এবং কালচারাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তারকামানের হোটেল-মোটেলগুলোতে বিভিন্ন ব্যান্ড সংগীতের আয়োজন করা হয়েছে।

পর্যটন উদ্যোক্তা বেলাল আবেদীন ভুট্টো বলেন, ‘এবার নতুন বছরে পর্যটকদের চাপ কম। শহরের হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট আছে। এতে কম সংখ্যক পর্যটক রুম বুকিং দিয়েছেন।’

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোডের হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি মুকিম খান বলেন, ‘আগে নতুন বছরকে বরণ ও পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের বাড়তি চাপ থাকতো। কিন্তু এ বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে সৈকতে কনসার্ট কিংবা বড় কোনও অনুষ্ঠান না থাকায় পর্যটকদের ওপর প্রভাব পড়েছে। ফলে আশানুরূপ পর্যটক আসেননি।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, ‘সমুদ্রসৈকতসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আশা করছি, পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনও ধরনের সমস্যা তৈরি হবে না।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সমুদ্রসৈকতের উন্মুক্ত স্থানে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। তবে হোটেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে।’

পর্যটন-এর আরও খবর