আবার বাড়ছে বিদ্যুতের দাম

ঘোষণা যে কোনো দিন

  বিশেষ প্রতিনিধি    28-02-2023    200
আবার বাড়ছে বিদ্যুতের দাম

আবারও বাড়ছে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। চলতি সপ্তাহে এ ঘোষণা দেওয়া হতে পারে, যা ১ মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। যে কোনো দিন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বর্ধিত বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে বাজারে পণ্যমূল্যও বেড়ে যাবে। ফলে আবারও সাধারণ মানুষের খরচের বোঝা বাড়বে।

এবারও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন করে দাম বাড়ানো হলে গত ১৪ বছরে এ নিয়ে ১২তমবারের মতো গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নতুন করে দাম নির্ধারণ করা হলে সেটি ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ মার্চ মাসের বর্ধিত বিল এপ্রিল থেকে দিতে হবে গ্রাহকদের।

সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি ৫ শতাংশ খুচরা এবং পাইকারিপর্যায়ে ৮ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তার ১৮ দিন আগে গত ১২ জানুয়ারি খুচরাপর্যায়ে ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে গত দুই মাসের ব্যবধানের খুচরাপর্যায়ে তিন দফা বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এ ছাড়া এক দফা বাড়ানো হয়েছে

গ্যাসের দাম। এর আগে গত ২১ নভেম্বর পাইকারি বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। সেই সময় বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়, যা ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়।

সর্বশেষ দুই দফায় গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম প্রায় ১১ শতাংশ বাড়ানো হয়। পাইকারি বিদ্যুতের দাম ফিডারভেদে সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এরই মধ্যে ১৭ জানুয়ারি শিল্পকারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রচ- চাপ তৈরি করছে।

সাধারণ মানুষ কীভাবে সামলাবে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের কাছে বিকল্প কোনো উপায় নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রির মধ্যে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো যে হিসাব দিয়েছে, তাতে নতুন করে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হলেও তারা লোকসানে থাকবে। আরও অন্তত ২ শতাংশ দাম বাড়ালে বিতরণ কোম্পানিগুলো কিছুটা লাভ করতে পারবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের শুধুু অবকাঠামো আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব ধরনের উপরকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কয়লা, গ্যাস, জ্বালানি তেল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চরম অস্থিতিশীল জ্বালানির বাজার। বেশি দামে জ্বালানি পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আইএমএফের পরামর্শ রয়েছে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার। এ কর্মকর্তা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ আছে সরকারের মধ্যে। কারণ ডলার সংকটে চাহিদা অনুযায়ী তেল, গ্যাস, কয়লা আমদানি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ০৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে। নতুন করে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হলে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবহারকারীদের আরও ৫ শতাংশ দাম বাড়বে।

জাতীয়-এর আরও খবর