৯ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন ভাসানী

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-03-2023    185
৯ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন ভাসানী

১৯৭১ সালের ৭ মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পুরো দৃশ্যপট বদলে যায়। পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে মুজিবময়। আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মধ্যে ৯ মার্চ সবশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপরে ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বাঙালির স্বধীনতা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তের প্রতি জনসম্মুখে একাত্মতা ঘোষণা করেন ভাসানী। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর সাত কোটি মানুষ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ায় তাদের মোবারকবাদ জানান ভাসানী।

এছাড়া একে একে সরকারি, আধা সরকারি, বে-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। সভা, সমাবেশ ও বিবৃতিতের মাধ্যম সংগঠনের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহীত সকল কর্মসূচি ও সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের শপথ নেওয়া হয়। অপর এক প্রস্তাবে ‘ইনস্টিটিউট অব চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস’ নামকরণ করা হয়।

অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টম দিন ছিল ৯ মার্চ। তখন সর্বত্র হরতাল। যানবাহন, জরুরি সার্ভিস ও ব্যাংক ছাড়া হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, আধা সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ঘরে ঘরে কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। যানবাহন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষ, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। স্টেট ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশের বাইরে টাকা পাঠানো বন্ধ রাখে।

পল্টন ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সেদিনের বক্তব্য অন্যদিকে মোড় নেয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান ন্যাপ প্রধান। তিনি বলেন, ‘অন্যথায় ১৯৫২ সালের মতোই আমি ও শেখ মুজিব ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করব। ইয়াহিয়া খান, তোমার যদি পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচ কোটি মানুষের জন্য দরদ থাকে তাহলে তুমি পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন ঘোষণা করো।

ভাসানী বলেন, ‘আমি অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করি না। অহিংসার কথা বাদ দাও, এটা অবাস্তব। আমার নবী (সা.) বলতেন, প্রথমে আক্রমণ করো না। কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে তার তেরটা কেন চৌদ্দটা বাজিয়ে দাও।’

আন্তর্জাতিক বিশ্বও বুঝতে শুরু করছিল, যে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট এদিন পূর্ব পাকিস্তান থেকে কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকায় উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। জাপানের পররাষ্ট্র দফতর পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদেরও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়।

জাতীয়-এর আরও খবর