কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের বলি পাঁচ শতাধিক কলাগাছ

  বিশেষ প্রতিনিধি    22-04-2023    114
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের বলি পাঁচ শতাধিক কলাগাছ

কক্সবাজার সৈকতের হোটেল-মোটেল জোনের পাশে দৃষ্টিনন্দন চার কিলোমিটারের কলাতলী সৈকত সড়ক। সড়কের দুই পাশে পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ।

শুক্রবার সকাল থেকে পথচারীরা দেখতে পান, সড়কের মধ্যভাগে কয়েক শ কলাগাছ দাঁড়িয়ে আছে। গাছগুলো সড়ক বিভাজকের বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সৈকত এলাকায় কয়েকটি গেস্টহাউসের কর্মচারীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ২০-২৫ জন শ্রমিক সৈকত সড়কে প্রায় ৩০০টি কলাগাছ রোপণ করেন।এছাড়া শুক্রবার রাতে শহরের হাসপাতাল সড়ক ও স্টেডিয়াম ও হাইস্কুল সড়কের পাশে শতাধিক কলাগাছ খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাপখতে দেখা হয়েছে।

এ সময় শহর ছাত্রলীগ ও পৌর আরওয়মী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে।

তাঁরা কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদলের দাবিতে এই ‘কর্মসূচি’ করেছেন বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।

তবে এই দাবির পক্ষে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগেও কক্সবাজারে বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বদলের দাবিতে কলাগাছ রোপণের নজির রয়েছে।

সড়কটি পড়েছে পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহেদুল ইসলাম বলেন, কারা সড়কে কলাগাছ রোপণ করেছেন তিনি জানেন না।

যোগাযোগ করা হলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান বলেন, সড়কে কলাগাছ রোপণের সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। তবে মেয়র মুজিবুর রহমানের পক্ষে অতি উৎসাহী দলের কিছু লোক কলাগাছগুলো রোপণ করেন বলে জানা গেছে।

প্রতিবাদ হিসেবে কলাগাছ লাগানো হলেও জেলা ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না। ছাত্রলীগ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষেই মাঠে থাকবে।

আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। এতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরপর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।

কক্সবাজার পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ সাত নেতা দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক দলের মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে মেয়র মুজিবুর রহমান এখন পর্যন্ত নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলছেন না।

কলাগাছ রোপণের বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও মেয়র মুজিবুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, মুজিবুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে দলের কিছু অতি উৎসাহী লোকজন শহরে কলাগাছ রোপণ করেছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এর সঙ্গে মুজিবুর রহমানের সম্পৃক্ততা নেই। মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর (নজিবুল) কথা হয়েছে, তিনি (মুজিবুর) নৌকার পক্ষে কাজ করবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন নেতা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কক্সবাজারের দুই সংসদ সদস্য জাফর আলম (কক্সবাজার-১) ও সাইমুম সরওয়ার কমলের (কক্সবাজার-৩) বিরোধ রয়েছে। এই দুই সংসদ সদস্যের তৎপরতায় মুজিবুর রহমান মনোনয়ন পাননি বলে রাজনীতির মাঠে আলোচনা রয়েছে।

মাহবুবুর রহমানের পক্ষে সাইমুম সরওয়ার মাঠে নামায় মুজিবুর রহমানের অনুসারীরা খেপেছেন। তাঁরাই নৌকার প্রার্থী বদল চেয়ে সৈকত সড়ক, প্রধান সড়কসহ শহরের অলিগলিতে কলাগাছ লাগাচ্ছেন।

শহরের সড়ক ও অলিগলিতে কলাগাছ রোপণের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, কলাগাছ লাগিয়ে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে। দলের নেতা-কর্মীরা নৌকা প্রতীকের পক্ষে আছেন।

কক্সবাজারে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে কলাগাছ লাগিয়ে ‘প্রতিবাদ’ জানানোর ঘটনা এটিই প্রথম নয়। রাজনৈতিক নেতা ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০১ সালে কক্সবাজার-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান।

তখন ওই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য খালেকুজ্জামানের অনুসারীরা সড়কে কলাগাছ লাগিয়ে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা খালেকুজ্জামানের ছোট ভাই সহিদুজ্জামানকে দলীয় প্রার্থী করার দাবি জানান।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হলে কলাগাছ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ারের সমর্থকেরা। তাঁরা কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু, ঈদগাঁও, ঝিলংজাসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার কলাগাছ রোপণ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

দলীয় নেতারা জানান, এর ধারাবাহিকতায় গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত অনেকে কলাগাছ রোপণ করে প্রতিবাদ করেছিলেন।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ২০০১ সাল থেকে কলাগাছ কক্সবাজারে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিবাদের হাতিয়ার স্বরূপ ব্যবহার হয়ে আসছে। মুহূর্তে কয়েক হাজার কলাগাছ কেটে সড়কে, অলিগলিতে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। বিপুল গাছ কেটে ফেলায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সদর পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি দীপক দাশ লেখেন- “এরা কারা, ———- জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকার বিপরীতে কক্সবাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কাজে ব্যবহারিত শত শত কলা গাছ রাতের অন্ধকারে কেটে রাস্তার দুইপাশে খাম্বার সাথে বেঁধে দেওয়ার কারন কি? আর কোন গাছ পেলনা কাটার জন্য , বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখ জনক।”

সারাদেশ-এর আরও খবর