আ. লীগ পুরোনো কায়দায় আরেকটি নির্বাচন করতে চায়: মির্জা ফখরুল

  বিশেষ প্রতিনিধি    01-05-2023    108
আ. লীগ পুরোনো কায়দায় আরেকটি নির্বাচন করতে চায়: মির্জা ফখরুল

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরোনো কায়দায় আরেকটি নির্বাচন করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে ভোট দিতে না পারেন, ভোট চুরি করে যেন ক্ষমতায় আসতে পারে এবং আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে, সে জন্য এখন থেকেই হুমকি দিয়ে জনগণকে ভয় দেখাতে চায় সরকার।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে এসব অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। মহান মে দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা আড়াইটায়। কিন্তু এরও প্রায় দুই ঘণ্টা আগে থেকে রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের দিকে আসতে থাকেন। একপর্যায়ে বেলা একটা থেকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। নেতা-কর্মীদের অনেকে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে নাইটিংগেল মোড়, কাকরাইল মোড়, মালিবাগ মোড়, মৌচাক মোড় হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

এ কর্মসূচি ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

কেউ যাতে কিছু লিখতে না পারে, সে জন্যই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এই আইনে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীকেও এই মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। ভয় দেখিয়ে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সর্বোচ্চ আদালতকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এই সরকার শ্রমিক ও কৃষকবিরোধী সরকার বলেও অভিযোগ করেন।

অগ্নি-সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অগ্নি-সন্ত্রাস তো করেন আপনারা। আপনারা বাসে আগুন লাগিয়ে বিরোধীদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘একজন মন্ত্রী বলছেন, এটাকে নিয়েও নাকি আমরা রাজনীতি করছি। ধিক্কার দিই তাদের, যারা একজন অসুস্থ নেত্রীকে নিয়ে এ ধরনের কথা বলতে পারেন। তাকে আপনারা চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না। দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না। মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে তাকে আটক করে রেখেছেন।’

সমাবেশে পুলিশের আইজিপির দেওয়া একটি বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘পুলিশের আইজিপি বলছেন, নির্বাচনের আগে কোনো গোলযোগ বরদাশত করা হবে না। গোলযোগ কোথায় দেখছেন? গোলযোগ তো সৃষ্টি করছেন আপনারা। আজ খুলনায় শ্রমিক দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে পণ্ড করে দিয়েছেন। সেখান থেকে শ্রমিক দলের সেক্রেটারিকে গ্রেফতার করেছেন।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, মনে রাখতে হবে, এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে কী থাকবে না। মানুষ মুক্ত হবে কী হবে না। এবারের লড়াই স্বাধীনতার লড়াই, মুক্তির লড়াই, খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসার লড়াই। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার লড়াই। শ্রমিকদের অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াই।

সমাবেশে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান এবং আরও জুনিয়র পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত থাকলেও স্থায়ী কমিটির গয়েশ্বর চন্দ্র সদস্য রায় পুরোটা সময় সমাবেশ মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি হাসান খান, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, সুমন ভুঁইয়া, কাজী শাহ আলম রাজা, বদরুল আলম, কামরুন জামান। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহীম, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহ আবু জাফর, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, মীর সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান প্রমুখ ।

জাতীয়-এর আরও খবর