২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া: প্রধানমন্ত্রী

  বিশেষ প্রতিনিধি    23-06-2023    119
২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া: প্রধানমন্ত্রী

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও দেশের গ্যাস সম্পদ বিক্রিতে রাজি হননি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে বিএনপি নেত্রী গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারিনি। আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি বলেছিলাম, এই গ্যাস জনগণের। আর কতোটুকু গ্যাস আছে জানি না।

‘কাজেই আমার পক্ষে বাংলাদেশের সম্পদ, মানুষের সম্পদ শুধু ক্ষমতার লোভে তা বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকবো, সেই বাপের মেয়ে আমি না। আমরা চাইনি, কিন্তু মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া।’

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা জনগণের কথা চিন্তা করেনি, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে কী ঘটেছে বাংলাদেশে? একের পর এক ক্যু, সেনাবাহিনীর মুক্তিযুদ্ধের অফিসারসহ হাজার হাজার অফিসার-সৈনিকদের হত্যা, বিমান বাহিনীর অফিসার-সৈনিকদের হত্যা করেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা খুনিদের সাথে হাত মেলায়নি তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দি; নেতাকর্মীদের দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে, খুন করেছে, লাশ গুম করেছে। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীর অফিসার-সৈনিকদের হত্যা করে গুম করা হয়েছে। হত্যা-খুন-গুম-সন্ত্রাস এই রাজত্বই হয়েছিলো আর প্রতি রাতে কারফিউ ছিল। মানুষের কোনও অধিকারই ছিল না। ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে সেখানে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার জন্য, এই যে নির্বাচনের কারচুপির যে সংস্কৃতি- সেটাও কিন্তু পঁচাত্তরের পর থেকে শুরু।

তিনি বলেন, একুশ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন বাংলাদেশের কী চিত্র দেখেছি। হাড্ডিসার-কঙ্কালসার দেহ, পেটে ক্ষুধার জ্বালা, পরনে ছিন্ন কাপড়, বিদেশ থেকে কাপড় এনে তাদের বিলি করা হতো; একবেলা খাবার জোটাতে পারে না, থাকার মতো কুড়ে ঘরটা পর্যন্ত নেই, রোগে কোনও চিকিৎসা নেই। সেই বাংলাদেশ তো আমার বাবা চায়নি। তিনি চেয়েছিলেন, এদেশের প্রতিটি মানুষ অন্তত দু’বেলা পেট পুরে খাবে। রোগে চিকিৎসা পাবে, শিক্ষা পাবে। আর সেই পদক্ষেপ কিন্তু তিনি নিয়েছিলেন।

‘কিন্তু একুশ বছর যারা একের পর এক ক্ষমতা দখল করে তারা কিন্তু মানুষের দিকে তাকায়নি। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করেছে, সরকার জনগণের সেবক। কারণ, আমি বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগণের সেবক হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রী না।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ যারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, পলাশীর প্রান্তরে যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো, আওয়ামী লীগ সেই সূর্য উদিত করেছে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করে দিয়েছে, স্বাধীন দেশ দিয়েছে।

এসময় দেশে প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি বর্ণনা করে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করায় নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ছোট ছেলে-মেয়েকে রেখে আমি দেশে ফিরে আসি এদেশের মানুষের জন্য। যখন আমি এয়ারপোর্টে নেমে আসি হাজার হাজার মানুষ। একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন করে যে সম্মান পেয়েছিলো বাঙালি সেই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া। শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের উন্নত জীবন দেওয়া, যা আমার বাবা দেখেছিলেন। যে জন্য বারবার কারাবরণ করেছেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। সেই প্রত্যয় নিয়ে ফিরে এসেছিলাম।

আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিক্রমা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শের-ই-বাংলা যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন সেটার কনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই পূর্ব বাংলায় মিরপুর সিরামিকসের কথা জানেন। এই সিরামিক কোম্পানি করার জন্য তাবানি গ্রুপকে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। আজকে আমাদের দেশের যে সিনেমা শিল্প, সেই এফডিসি কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখন ’৫৬ সালের মন্ত্রী, ’৫৭ সালে এই আইনটা সংসদে পাস করালেন।

‘ঢাকা বিদ্যুৎ বোর্ড, ঢাকা ওয়াসা, তেজগাঁও শিল্প নগর সবই কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাকালে হয়েছে। শুধু তাই নয়, একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া এবং শহিদ মিনার গঠন করতে প্রকল্প গ্রহণ করে বাজেটে টাকা দিয়ে তার ডিজাইন করে নির্মাণের কাজ আওয়ামী লীগই শুরু করেছিল। শহিদ মিনার নির্মাণ ও শহিদ দিবস ঘোষণা আওয়ামী লীগ যেমন দিয়েছে, আবার তার অনেক বছর পর আমরা যখন সরকার গঠন করি সেই ’৯৬ সালে এই একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে।’

’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলাম। ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিলাম। স্বাক্ষরতার হার ৪৫ থেকে ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করেছি। চিকিৎসা সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি।

‘প্রতিটি পরিবার যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এজন্য ‘‘একটি বাড়ি একটি খামার’’ প্রকল্প নিয়ে তাদের সহযোগিতা করেছি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ভূমিহীন মানুষদের জন্য যেমন আমার বাবা ঘর করার প্রকল্প নিয়েছিলেন, আমরা সেই ভাবে মানুষকে ঘর করে দিয়েছি।’

জাতীয়-এর আরও খবর