জেলে সামজে দুশ্চিন্তা : জোয়ারের আঘাতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত

  বিশেষ প্রতিনিধি    13-09-2022    204
জেলে সামজে দুশ্চিন্তা : জোয়ারের আঘাতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত

দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গেলো ৪ দিন ধরে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীতে নোঙর করেছে কয়েক হাজার মাছ ধরার ট্রলার। এসব ট্রলারে অবস্থান করছে শতশত জেলে। তবে সবারই মুখে দুশ্চিন্তা। আর ট্রলার মালিকরাও ঘাটে বসে রয়েছে। অন্যদিকে, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে একই সঙ্গে জোয়ারের সময় সাগরের বিশাল ঢেউয়ে আঘাত করছে সৈকতপাড়ে। ঝুঁকির মুখে অনেক স্থাপনা। জিও ব্যাগ দিয়েও রক্ষা করতে পারছে না সৈকতের বালিয়াড়ির ভাঙ্গন। এতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারের সৈকত। যার কারনে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সাগরের বিশাল ঢেউয়ে জিওব্যাগ ফেটে নতুন করে আঘাত হানছে। আর ভাঙ্গনের এমন দশায় শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার জেলা মৎস্য সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, কক্সবাজারে নিবন্ধিত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৮’শো। আর নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাড়ে ৫ হাজার ট্রলার বাঁকখালী ঘাটে ফিরে এসেছে নোঙর করেছে। এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি ইয়াকুব বলেন, আগস্ট মাসে ৩টি দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগরে মাছ শিকার করতে পারেনি। চলতি মাসের শুরুতে কয়েক দিন সাগরে মাছ শিকারের পর আবারও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে হয়েছে। এখন টাকা-পয়সা নেই, ট্রলার মালিকও টাকা দিচ্ছে না। খুবই বিপদে রয়েছি। ট্রলার মালিক কামাল উদ্দিন বলেন, লোকসান দিতে দিতে আর পারছি না। সর্বশেষ ৪ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে ট্রলার পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কারণে গত ৩দিন উপকূলে অবস্থান করছে। সাগর থেকে ফিরে আসার সময় মাত্র ১ লাখ টাকা মাছ নিয়ে আসছিল। এখন লোকসান হয়েছে ৩ লাখ টাকা। গত মাসেও লোকসান হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এভাবে আর চলা যাচ্ছে না। কক্সবাজার অবতরণ কেন্দ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার জেলায় উপকূলে নোঙর করেছে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি মাছ ধরার ট্রলার। পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার আরও হাজার খানেক ট্রলারের অবস্থান এখন কক্সবাজারে। সবার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আনুমানিক ৬’শ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে ট্রলার মালিকদের। একই সঙ্গে বিপদে পড়েছেন ট্রলারের প্রায় লক্ষাধিক জেলে। এদিকে মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। আর সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ আঁছড়ে পড়ছে উপকূলে। সৈকতের ভাঙ্গন ঠেকাতে দেয়া জিও ব্যাগও রক্ষা করতে পারছে না বালিয়াড়ির ভাঙ্গন। তীব্র ঢেউয়ে জিও ব্যাগও ফেটে গেছে। আর তছনছ হয়েছে শহরের রাস্তাঘাট। জিও ব্যাগ তছনছ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকরা নামতে পারছেন না সৈকতে। প্রাথমিকভাবে সৈকতের কিটকট ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের চলাফেরার জন্য বালি ভর্তি বস্তা বসানোর কাজ করছে। আর পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় হাটু পানির নিচে না নামতে মাইকিং করছে বিচকর্মী, লাইফ গার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বেড়াতে আসা পর্যটক রহমান কবির বলেন, দু’দিন ধরে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। কিন্তু সৈকতে গোসল করতে নামতে পারছি না। কারণ বিশাল বিশাল ঢেউ আঘাত করছে উপকূলে। ইচ্ছে থাকলেও ভয়ে পরিবার নিয়ে সাগরে গোসলে নামছি না। সাগরপাড়ের কিটকট ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে লাবণী পয়েন্টে ছাতার নিচে পর্যটকদের বসিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালান। কিন্তু সাগরের ভয়াল আগ্রাসনে তিনি দুশ্চিন্তায়। তীব্র ভাঙ্গনে তার আয়ের উৎস বন্ধ হতে যাচ্ছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ জানায়, ভাঙ্গন প্রতিরোধে টেকসই প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ মিয়া সংবাদকে জানান, সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গেল ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৫ থেকে ৮৭ মিলিমিটার। লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে এবং আরও ২/৩ দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে। পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে সাগরে জোয়ারের সময় ২ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সৈকত জোনের ট্যুরিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম সংবাদকে জানান, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। তাই পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তার জন্য বালিয়াড়িতে টহল দিয়ে দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে সাগরের উচ্চ জোয়ারের কারণে বালিয়াড়ির ভাঙ্গন হয়েছে।ভাঙ্গনের ফলে পর্যটকদের চলাফেরাও কিছু সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ। উল্লেখ্য, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাজিরারটেক থেকে শুরু করে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সাগরতীরজুড়ে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্টা করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। সূত্র: কক্সবাজার কণ্ঠ

পর্যটন-এর আরও খবর