জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌঢ়ঝাঁপ

  বিশেষ প্রতিনিধি    17-07-2023    166
 জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌঢ়ঝাঁপ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস বাকি থাকলেও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় সরব হয়ে উঠেছেন।বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারা বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কুশল বিনিময় করছেন তাঁরা। কোরবান পরবর্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন কিংবা দান খয়রাতের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগাম বার্তা দিচ্ছেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা জানান, দলীয় কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁরা জনগণের কাছাকাছি পৌঁছাতে চান। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও তাঁদের সঙ্গে আছেন। এছাড়া স্যোশাল মিডিয়ায় আগাম প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কর্মীদের মাঠে নামারও পরামর্শ দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, এলাকায় যারা অজনপ্রিয়,বিতর্কিত এবং নানা বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের বেশকিছু প্রার্থী আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। এ কারণে কক্সবাজার জেলাও অন্তত দুটি আসন থেকে পুরোনো প্রার্থীদের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

জানা যায়, প্রচলিত আইন বিধান মতে দেশের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে । সে হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র সময় আছে সাড়ে চার মাস ।

এদিকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচন কালীন সরকার গঠিত হবে। ওই সরকারে নতুন মুখ নিয়ে গঠিত হবে সংক্ষিপ্ত পরিসরের মন্ত্রী পরিষদ। নির্বাচনের সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত শুরু করেছে জোরেশোরে। শুধু আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা এলাকায় ছুটছেন না, গোপনে আবড়ালে বিএনপি, জামায়াতসহ সরকার দলের নেতারাও এখন গ্রামমুখী হচ্ছেন। নির্বাচনের এ চলতি হাওয়া দেশের সর্ব- দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারে এসে লেগেছে।

তবে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এখনো কক্সবাজার জেলায় বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা সংসদ সদস্য প্রার্থী হবেন এমন ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন । তথ্যানুসন্ধানে এ পর্যন্ত জেলার চারটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এমন ২৫ জন নেতার নাম পাওয়া গেছে।তারা হলেন

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ (সিআইপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রাশেদুল ইসলাম।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী- কুতুবদিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী আনছারুল করিম ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী।

কক্সবাজার-৩ (ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মুকুল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদ, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম,বর্তমান পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য এথিন রাখাইন,কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সাবেক সদস্য সুজন শর্মা ।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীনা আকতার চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোরশেদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি (প্রস্তাবিত) সাইফুদ্দিন খালেদ ও জেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর ।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, রাজনীতি করছি, আওয়ামী লীগ করছি, দীর্ঘ এক যুগ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও পালন করছি। পাশাপাশি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ও প্রত্যাশা- আমি দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী হই। আমি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। বড় বোন বর্তমান সংসদ সদস্য। দুই ভগ্নিপতি ও সংসদ সদস্য ছিলেন। তাই সবগুলো বিবেচনা করে আমি দল থেকে মনোনয়ন চাইবো। মনোনয়ন দিবে দল ও দলীয় প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যেহেতুে দল করি দলের সিদ্ধান্ত মানতে আমি বাধ্য ।

জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, রাজনীতিতে, দলে আমার দীর্ঘকালের শ্রম, মেধা, ত্যাগ রয়েছে। সমাজ ও মানুষের প্রতি ও দায়বদ্ধতা আছে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ও । আমার পিতা কক্সবাজার অঞ্চলে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং মহকুমা কমিটির প্রথম সাধারণ সম্পাদক। তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের একজন তিনিসার্বিক বিবেচনায় আমি দল থেকে মনোনয়ন চাইতেই পারি। চাওয়াটাই স্বাভাবিক । মনোনয়ন কে পাবেন সে সিদ্ধান্ত দিবে দল। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সাবেক সদস্য সুজন শর্মা বলেন, যারা এলাকায় কাজ করতে পারেননি এরকম অজনপ্রিয় ব্যক্তিদেরকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি । এছাড়া আওয়ামী লীগে নতুনত্বের আবহ তৈরি করার চেষ্টা চলছে, যেন মানুষ দলের ভিতরে এবং এলাকায় পরিবর্তনের ছোঁয়া পায়।যেটি হয়েছে ঢাকা-১৭ আসনে। সেরকম একটি পরিকল্পনার দিকে আওয়ামী লীগ যদি গিয়ে যায় সে বিবেচনায় নতুনদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।

এদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় যারা দলের বিরোধিতা করেছিল, সেই সমস্ত এমপিদেরকেও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া নাও হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কতটা পরিবর্তন করবে, তা নির্ভর করবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থার ওপর। নির্বাচনে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশলের ওপর নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, এখন থেকেই নির্বাচনী আসনগুলোতে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ কাজটি করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সারাদেশ-এর আরও খবর