সাইবার নিরাপত্তা আইনে জামিনযোগ্য ধারা আরও বাড়বে

  বিশেষ প্রতিনিধি    11-08-2023    96
সাইবার নিরাপত্তা আইনে জামিনযোগ্য ধারা আরও বাড়বে

সাইবার নিরাপত্তা আইনে জামিনযোগ্য ধারার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আইনটি পাশ হওয়ার আগেই বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এর পরিবর্তন আনা হতে পারে।

এছাড়া এই প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে সরকার ১৪ দিন পর্যন্ত মতামত গ্রহণ করবে বলেও জানিয়েছে তিনি।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে আগারগাঁও আইসিটি টাওয়ারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ রহিতকরণ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য ধারার সংখ্যা ছিল ১৪টি। নতুন প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬টিতে। অর্থাৎ জামিনযোগ্য ধারার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাজার পরিমাণ কমানো হয়েছে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইন পাশ হলে সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমের ভয়ভীতি দূর হবে।

তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংবাদমাধ্যমের আর কেউ হয়রানির শিকার হবেন না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব অপপ্রয়োগ হয়েছিল তা নতুন আইনে থাকছে না। ফলে সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংবাদমাধ্যমের আর কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে এক পয়সা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, জরিমানা সবসময় ২৫ লাখ টাকা হবে। অপরাধের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞ আদালত জরিমানা করবেন, আইনে এটা বলা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে সব ধারা জামিনযোগ্য করেছি। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অধিকাংশ ছিল জামিন অযোগ্য।

পুলিশকে ব্যক্তিগত ডিভাইস তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়নি

সাইবার নিরাপত্তা আইনে পুলিশকে পারসোনাল ডিভাইস তল্লাশি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এমনকি, আইন বহির্ভূতভাবে পারসোনাল ডিভাইস চেক করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।

সম্প্রতি দেখা গেছে বাসেও পারসোনাল ডিভাইস পুলিশকে চেক করতে দেখা গেছে, এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়টি এ আইনে নিশ্চিত হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ আইনে পুলিশ ইমার্জেন্সি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ডিভাইস চেক করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোনও অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, সংঘটিত হলে বা সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্ট করে ফেলার সম্ভাবনা দেখা দিলে পুলিশ তা মনে হওয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করে চেক করতে পারবে। এখানে বাসে পারসোনাল ডিভাইস তল্লাশি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ আইন বহির্ভূতভাবে চেক করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অন্য আইনেও নেওয়া যায়। পুলিশ অন্যায় করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই।

এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, সেখানে র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতার বিষয় আসলে সবাইকে কিন্তু আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

মিথ্যা মামলার বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলার কোনও প্রতিকার রাখা যায় কি না, আমরা তা দেখবো।

সাইবার জগতের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু কিছু মানুষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনকে ‘নতুন বোতলে পুরানো মদ বলছে’, এটা ঠিক নয়। যেমন ২৯ ধারায় মানহানিতে জেল ছিল, এটা এখন নেই। ২১ ধারায় জেল ছিল ১০ বছর এখন এটা কমে ৭ বছর হয়েছে, তাহলে এটা কি নতুন নয়? কেউ যদি বলে নতুন বোতলে পুরাতন মদ, তাহলে এটা হবে শুধু সমালোচনার উদ্দেশে সমালোচনা করা। এ আইন কারও কণ্ঠরোধের জন্য নয়, সাইবার জগতের নিরাপত্তা জন্য।

আইনের অপব্যবহার হলে তার জন্য কোন ক্ষতিপূরণ থাকবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যদি কেউ অপরাধ না করে কারাদণ্ড ভোগ করেন তাহলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন কি-না এ বিষয়টি আমরা বিবেচনায় রাখব। আমরা চেষ্টা করব তিনি যেন ক্ষতিপূরণ পান। এই বিষয়টি আমরা আমাদের সাইবার সিকিউরিটি আইনে রাখার চেষ্টা করব।

আইনমন্ত্রী বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আইনের খসড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতও গ্রহণ করা হবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে যেসব মামলা চলমান আমি তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। যখন অপরাধ হবে সেই সময়ের বিদ্যমান থাকা আইনের অধীনে বিচার হবে। তবে তবে আমাদের সংবিধানে বলা আছে, নতুন আইনে সাজা বেশি হলে তা কার্যকর হবে না। এক্ষেত্রে সাজা কম হলে তা কার্যকর করা যাবে কি-না, সেই বিষয়টি বলা নেই। কাজেই আমরা আদালতকে নতুন আইনটি আমলে নেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেব। কেননা, নতুন আইনে সাজা এবং জরিমানা কমানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর খসড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আগামী দুই সপ্তাহ এই খসড়ার বিষয়ে মতামত গ্রহণ করা হবে। আইসিটি বিভাগের পলিসি শাখায় এই মতামত দেওয়া যাবে। মতামতের প্রেক্ষিতে সংশোধনের প্রয়োজন হলে সংশোধন করে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে আবারও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করা হবে। আর সেখান থেকে অনুমোদন পেলে সংসদে উত্থাপন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আইন সচিব গোলাম সারওয়ার, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মইনুল কবির ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শামসুল আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়-এর আরও খবর