সংসদে বিরোধী দল নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা, সংসদই ঠিক করবে বললেন আইন বিশেষজ্ঞরা

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-01-2024    46
সংসদে বিরোধী দল নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা, সংসদই ঠিক করবে বললেন আইন বিশেষজ্ঞরা

সংসদে বিরোধী দল নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরপরই দুটো বিষয় নিশ্চিত হয়ে যায়; একটি কারা হচ্ছে সরকারি দল এবং অন্যটি বিরোধী দলেই বা থাকছে কারা। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের ভিত্তিতেই এ বিষয় দুটি নিষ্পন্ন হয়। তবে এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়া শুরু করলেও অস্পষ্টতা রয়েছে বিরোধী দল নিয়ে। এ চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা, তবে সংসদই ঠিক করবে বললেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে ১৫১টি আসন পেলে সরকার গঠন করতে পারে একটি রাজনৈতিক দল। এর চেয়ে কম আসন পেলে অন্য দলগুলোর সমর্থনের দরকার পড়ে। এবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ পাবে। প্রশ্ন হচ্ছে- তখন বিরোধী দল কে হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সংবিধান বা জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালিবিধির কোথাও বিরোধী দল সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ন্যূনতম কত আসন পেলে বিরোধী দল হওয়া যাবে, এ বিষয়েও নেই সুষ্পষ্ট কোনো নীতি।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, পার্লামেন্টই ঠিক করবে কে বিরোধী দল হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠরা সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পাবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের বাইরে যারা থাকবেন তারা বিরোধী দল হওয়ার আগ্রহ দেখাতে পারেন। কত আসনের ভিত্তিতে বিরোধী দল হবে তা নিয়ে বাধাধরা কোনো নিয়ম নেই। বিরোধী দলের ক্ষেত্রে আসনসংখ্যা কোনো গুরুত্ব বহন করে না। ফলে সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল চূড়ান্ত করার বিষয়টি রাজনীতিতে কোনো সংকট সৃষ্টি করবে না বলেও মত দেন এই আইন বিশেষজ্ঞ।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ৩০০ আসনের মধ্যে প্রার্থী মারা যাওয়ায় একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত এবং গোলযোগের কারণে আরেকটি আসনের ফলাফল স্থগিত হয়েছে। বাকি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২টি আসন। ফলে প্রথা অনুযায়ী আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন রাষ্ট্রপতি। আসন প্রাপ্তির দিক থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। দলটির প্রার্থীরা ১১টি আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ একটি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি একটি আসনে জয়লাভ করেছে। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন প্রার্থী। স্বতন্ত্র হিসেবে বিপুল সংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কারণেই প্রশ্ন উঠেছে কারা হবে বিরোধী দল। তারা নতুন কোনো জোট গঠন করবে কি না তা নিয়েও রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সংসদে বিরোধী দল কে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, লিডার অব দ্য হাউস অর্থাৎ যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনিই পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বুঝে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এ বিষয়ে সকলকে অপেক্ষা করতে বলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, যদি জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকার সুযোগ না পায় তাহলে বিকল্পও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ন্যূনতম আসন পাওয়া কোনো দল যেমন জাসদ, কল্যাণপার্টি বা ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে জোট করেও বিরোধী দলে যেতে পারে। এ অবস্থায় যে দলের সঙ্গে জোট হবে ওই দলের প্রধান বিরোধী দলের নেতা হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলে থাকার বিষয়ে অস্বীকৃতি জানাতে হবে। অথবা স্বতন্ত্রদের নিয়ে করা কোনো মোর্চার আসনসংখ্যা জাতীয় পার্টির চেয়ে বেশি হতে হবে। সেটি হলে আসনসংখ্যার ভিত্তিতে গঠিত মোর্চা সংসদে বিরোধী দল হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। তবে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত বেশির ভাগ প্রার্থী আওয়ামী লীগের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় এই বিকল্প বিরোধী দলের বিষয়টি বাস্তবে ঘটবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।

জাতীয়-এর আরও খবর