এমন শীত আরও কয়েক দিন

  বিশেষ প্রতিনিধি    15-01-2024    40
এমন শীত আরও কয়েক দিন

যাঁরা ভাবছেন শীতের তীব্রতা সামনে কমে আসবে, তাঁদের জন্য কিছুটা দুঃসংবাদ আছে। এই জানুয়ারি মাসের বাকি অর্ধেকটা সময় শীতের তীব্রতা খুব বেশি কমে আসার সম্ভাবনা তেমন নেই। এমনিতেই গড় তাপমাত্রা বিবেচনায় বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস জানুয়ারি, এর পরই ডিসেম্বর।

তবে এবার ডিসেম্বরে দেশের সব এলাকায় শীতের তীব্রতা ছিল না। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় শীতের অনুভূতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। রাজধানী ঢাকায় দিনে দেড়–দুই ঘণ্টার বেশি রোদ থাকছে না—চার দিন ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় সারা দিনে একবারও ঠিকমতো সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তিন দিন ধরে পরিস্থিতি এমন, যেন ঘন কুয়াশার চাদর ঘিরে রেখেছে আশপাশ। শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা পেতে উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকার মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যার পর বাইরে কমই বের হচ্ছেন।

তীব্র শীতের সঙ্গে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় রাতে ও ভোরের দিকে কুয়াশার দাপট অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দমকা হাওয়া বা বৃষ্টি না নামলে ঘন কুয়াশা সরবে না। আর কুয়াশা না সরলে রোদ এসে শীতের দাপট কমাতে পারবে না। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আকাশে মেঘ জমতে পারে। অনেক জায়গায় শুরু হতে পারে বৃষ্টি। বৃষ্টি চলতে পারে দু–তিন দিন। এরপর শীতের তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। তবে বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কিছুটা বাড়বে। তখন দিনে শীতের অনুভূতি কিছুটা কমে আসবে। তবে রাতে শীতের তীব্রতা এখনকার মতোই থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদেরা সারা দেশে কুয়াশার দাপট বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে গত ডিসেম্বর মাসজুড়ে থাকা বাড়তি তাপমাত্রাকে দায়ী করছেন। ডিসেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি ছিল। জানুয়ারিতে এসে তাপমাত্রা হঠাৎ ৪–৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় প্রচুর কুয়াশা তৈরি হয়েছে। কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো ভূমিতে কম আসতে পারায় শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে। গত তিন–চার দিনে দেশের অনেক এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের চার জেলা—রাজশাহী, পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা ও দিনাজপুরে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে—৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গতকাল রাজধানীতে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। যে কারণে রাজধানীতে শৈত্যপ্রবাহ না থাকা সত্ত্বেও শীতের অনুভূতি ছিল বেশি।

ঢাকার বাইরে জনজীবনে স্থবিরতা

তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের। একই সঙ্গে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

মাথায় মাফলার জড়িয়ে পুরোনো কালো মোটা জ্যাকেট গায়ে সকালে রিকশা নিয়ে বের হওয়া আলাউদ্দিন বলেন, রাস্তায় যাত্রী কম। যে কারণে তাঁর আয়ও কম। এমন ঠান্ডা অনেক দিন পড়েনি।

খুলনা শহরের দৌলতপুরের বাস্তুহারা সিটি করপোরেশন মার্কেটে মাছ কাটার কাজ করেন আবদুল মাজেদ। তিনি বলেন, ঠান্ডায় হাত অবশ হয়ে যাচ্ছে।

ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে

খুলনার মতোই একই পরিস্থিতি সাতক্ষীরায়ও। সেখানে সরকারি হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ১১টি। আর ডায়রিয়া শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা তিনটি। এর মধ্যে সাধারণ শিশু ওয়ার্ডে ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৮৫ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। অপর দিকে একই সময়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২৩৫ শিশু সেবা নিয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স সালেহা খাতুন জানান, শিশু ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা তিনটি থাকলেও গত ১২ দিনে গড়ে প্রতিদিন সর্বনিম্ন¤১৩ জন থেকে সর্বোচ্চ ৩৪ জন ভর্তি ছিল।

উত্তরের জেলা দিনাজপুর ও নীলফামারীতেও তীব্র শীতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এই দুই জেলার গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন বাড়ির উঠানে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের তাপ নেওয়ার দৃশ্য এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। গ্রামের টিনের ঘরের চালে রাতে কুয়াশা যেন বৃষ্টির মতো ঝরে।

কুয়াশায় ফসলের ক্ষতি

নীলফামারী সদরের খোকশাবাড়ী, পলাশবাড়ী ও টুপামারী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শীত ও কুয়াশার কারণে ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পলাশবাড়ী ইউনিয়নের নটখানা গ্রামের সুবাস চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, দেড় বিঘা জমিত মরিচগাছ লাগিয়েছেন তিনি। কুয়াশায় মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে।

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ফসলের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পাশাপাশি পানি ঢালার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।

চলাচলে সমস্যা

কুয়াশার কারণে দেশের অনেক এলাকায় আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে ভোর থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কয়েক দিন ধরেই এ অবস্থা চলছে।

ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নামতে পারেনি। সেগুলো পরে কলকাতায় চলে গেছে। তবে বেলা বেড়ে যাওয়ার পরপর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে এসেছে।

ভোরে ও রাতে নদীপথে লঞ্চ–ফেরি চলাচলেও সমস্যা তৈরি করেছে ঘন কুয়াশা।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই সময়ে সাধারণত তীব্র শীত থাকলেও দিন এবং রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ৮ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। এ কারণে দিনে অন্তত শীতের তীব্রতা কম থাকে। কিন্তু গত চার দিন দেশের বেশির ভাগ এলাকায় রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকছে। যে কারণে শীতের কষ্ট বেড়ে গেছে।

সারাদেশ-এর আরও খবর