বাংলাদেশে কেমিক্যাল মেট্টোলজির ওপর গবেষণা কর্মের সফলতার কথা এলেই বিজ্ঞানী ড. মালা খানের নামটি চলে আসে। তার অক্লান্ত অধ্যবসায়, পরিশ্রমে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। ড. মালা খান কর্মরত রয়েছেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণার ‘ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস’-এ। তার অভিভাবকদের ইচ্ছে ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু ছেলেবেলায় ড. মালার আগ্রহ ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। সেই আগ্রহ থেকে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ভর্তি হওয়া কম্পিউটার সায়েন্স অব ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। ২০০১ সালে তিনি এই বিষয়ের ওপর গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। স্নাতকে মেধা তালিকায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করলেও অনার্সে তার থিসিসের বিষয় ছিল ‘ল্যাবরেটরি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণার জন্য তিনি বেসরকারি বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্লাজমা প্লাসে তার থিসিসের ওপর কাজ করেন। এখানে কাজ করতে গিয়েই তার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানের একটি নতুন ক্ষেত্র কেমিক্যাল মেট্টোলজি তথা দ্য সায়েন্স অব কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের ওপর গবেষণা করার আগ্রহ জন্মে। গবেষণা করার পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠান তাকে গবেষণা কর্মকর্তা পদে চাকরির প্রস্তাব দেয়। প্রথম এক বছর এই প্রতিষ্ঠানে তিনি খণ্ডকালীন চাকরির পাশাপাশি থিসিস সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০০ সালে ওই সংস্থায় গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কেমিক্যাল মেট্টোলজির ওপর কাজ করেন। এখানে কাজ করার সময়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত একটি ইন্টার ল্যাবরেটরি কমপ্যারিজনে অংশ নেন। এখানে অংশ নেয় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা, আইসিডিডিআরবি, বিএইসিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি গবেষণাগার। এখানে প্লাজমা প্লাস সর্বোচ্চ স্কোর করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্যোগে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের একটি সেমিনারে উপস্থিত বিজ্ঞানী-গবেষকদের সামনে তার গবেষণা কর্মটি উপস্থাপন করেন।
কেমিক্যাল মেট্টোলজির ওপর গবেষণা করতে গিয়ে ড. মালা খান লক্ষ্য করেন পণ্যের গুণগত মান নির্ণয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণাগারগুলোর অবস্থা হতাশাব্যঞ্জক। অথচ দেশে এই গবেষণাগারের গুরুত্ব অনেক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দেশীয় বোতলজাত পানির গুণগতমান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এই গবেষণা ফলাফল ২০০৩ সালে বই আকারে প্রকাশ করে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স। এ প্রসঙ্গে ড. মালা খান বলেন, আমাদের দেশে কেমিক্যাল মেট্টোলজি অবকাঠামো না থাকায় পণ্যের গুণগতমান সংক্রান্ত পরীক্ষা সঠিক প্রমাণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এর ফলে দেশীয় পণ্য বিদেশে বাজারজাতকরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বছরকয়েক আগে ২০০৭ সালে গুঁড়া দুধে মেলামাইনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। গুঁড়া দুধে মেলামাইনের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশে তা পরীক্ষণ করার রিট জারি করা হয়। কয়েকটি গবেষণাগারে এর পরীক্ষণ করা হয়। একেকটি গবেষণাগারে একেকরকম ফল পাওয়া যায়। এরপর এই পরীক্ষণের জন্য থাইল্যান্ড এর একটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। এই বিষয়টি গভীরভাবে আমাকে নাড়া দেয়। আমাদের দেশে কেমিক্যাল মেট্টোলজি অবকাঠামো গবেষণাগার থাকলে থাইল্যান্ডে যেতে হতো না। এই সমস্যা দূর করতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কেমিক্যাল মেট্টোলজি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন পূরণে কেমিক্যাল মেট্টোলজি অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে ২০০৭ সালে প্রস্তাব দিই। ইন্সট্রু–মেন্টেশন অ্যান্ড কেলিব্রেশন সার্ভিস ল্যাবরেটরি’র (আইসিএসএল) জন্য প্রজেক্ট কনসেপ্ট তৈরি করি। এই কনসেপ্টের ভিত্তিতে সরকার ‘ডেভেলপমেন্ট অব আইএসও ১৭০২৫ অ্যাক্রিডিটেড ইন্সট্রু–মেন্টেশন অ্যান্ড কেলিব্রেশন সার্ভিস ল্যাবরেটরি ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনাধীন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)-এর আওতায় বিজ্ঞানের নতুন শাখা কেমিক্যাল মেট্টোলজির যাত্রা শুরু হয়। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হয় আমাকে। পরে সরকার এর নামকরণ করে ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের এটি প্রথম এবং একমাত্র সংস্থা।
এখানেই থেমে থাকেননি ড. মালা খান। বাংলাদেশের পণ্যের মান নির্ণয়ের মানোন্নয়ন আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি কেমিক্যাল মেট্টোলজি সংক্রান্ত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এশিয়া প্যাসিফিক মেট্টোলজি প্রোগ্রাম ও ডিআরআইসিএম এর সদস্যপদ লাভ করেন। ডিআরআইসিএম যুক্ত হয় বিশ্বের ৩৯টি দেশের মেট্টোলজি নেটওয়ার্কের সঙ্গে। এর ফলে ডিআরআইসিএম-এর পরীক্ষণ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। সম্প্রতি জারিকৃত জাতীয় গুণমান নীতি ২০১৫তেও ডিআরআইসিএমকে ডেজিগনেটেড ইন্সটিটিউট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি বিআইপিএম এর দুটি কারিগরী কমিটি ওয়ার্কিং গ্রুপ অন অর্গানিক এনালাইসিস ও ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইনঅর্গানিক এনালাইসিস এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গবেষণার পাশাপাশি ড. মালা খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘ন্যাশনাল স্ট্রেটেজি ফর ডেভেলপিং কেমিক্যাল মেট্টোলজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার অব বাংলাদেশ (২০০৯-২১)’। ড. মালা খান কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে মেট্টোলজি সংক্রান্ত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় শীর্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৫ সালে এপিএমপি ডেন অ্যাওয়ার্ড।
গবেষণা কর্মে এই অর্জন সম্পর্কে নিজের অনুভূতি বলতে গিয়ে ড. মালা খান বলেন, ‘ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস’-এর গবেষণা কর্ম পরিচালনা করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে আমি নারী। কিন্তু আমার পরিবার আমাকে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে। সেভাবেই লালন করেছে। পরিচর্যা করেছে। পারিবারিক সহযোগিতা পাওয়ার কারণে কর্মস্থলে অনেক বাধা পেরিয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছি। সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তা না হলে হয়তো এতটা পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব হতো না। সমস্যা থাকবেই, সমস্যা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই আমার কাজের মূল লক্ষ্য।
ডা. মালা খান বেড়ে ওঠেন ঢাকায়। বাবা আবুল ফজল খান একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক। মা চামেলী বেগম গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। ঢাকার ধানমণ্ডির কাকলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ১৯৯২ সালে, বদরুন নিসা সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এইচএসসি পাস করেন।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পারিবারিক সহযোগিতা সম্পর্কে ড. মালা খান জানান, বিয়ের পর স্বামীর উৎসাহে পড়াশোনা ও গবেষণা কর্ম চালিয়ে যান। তিন মেয়ের মধ্যে বড় ও মেজ মেয়ে স্কুলে পড়ে। মেয়েরাও এখন বোঝে মা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। ওরাও তাকে সহযোগিতা করেন।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ০৯ অক্টোবর, ২০১৭, দেখুন: https://old-epaper.jugantor.com/2017/10/09/index.php -এর পেইজ-১৩-তে
মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে কাজ করছেন ড. মালা খান
বাংলাদেশে কেমিক্যাল মেট্টোলজির ওপর গবেষণা কর্মের সফলতার কথা এলেই বিজ্ঞানী ড. মালা খানের নামটি চলে আসে। তার অক্লান্ত অধ্যবসায়, পরিশ্রমে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। ড. মালা খান কর্মরত রয়েছেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণার ‘ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস’-এ। তার অভিভাবকদের ইচ্ছে ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু ছেলেবেলায় ড. মালার আগ্রহ ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। সেই আগ্রহ থেকে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ভর্তি হওয়া কম্পিউটার সায়েন্স অব ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। ২০০১ সালে তিনি এই বিষয়ের ওপর গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। স্নাতকে মেধা তালিকায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করলেও অনার্সে তার থিসিসের বিষয় ছিল ‘ল্যাবরেটরি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণার জন্য তিনি বেসরকারি বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্লাজমা প্লাসে তার থিসিসের ওপর কাজ করেন। এখানে কাজ করতে গিয়েই তার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানের একটি নতুন ক্ষেত্র কেমিক্যাল মেট্টোলজি তথা দ্য সায়েন্স অব কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের ওপর গবেষণা করার আগ্রহ জন্মে। গবেষণা করার পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠান তাকে গবেষণা কর্মকর্তা পদে চাকরির প্রস্তাব দেয়। প্রথম এক বছর এই প্রতিষ্ঠানে তিনি খণ্ডকালীন চাকরির পাশাপাশি থিসিস সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০০ সালে ওই সংস্থায় গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কেমিক্যাল মেট্টোলজির ওপর কাজ করেন। এখানে কাজ করার সময়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত একটি ইন্টার ল্যাবরেটরি কমপ্যারিজনে অংশ নেন। এখানে অংশ নেয় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা, আইসিডিডিআরবি, বিএইসিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি গবেষণাগার। এখানে প্লাজমা প্লাস সর্বোচ্চ স্কোর করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্যোগে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের একটি সেমিনারে উপস্থিত বিজ্ঞানী-গবেষকদের সামনে তার গবেষণা কর্মটি উপস্থাপন করেন।
কেমিক্যাল মেট্টোলজির ওপর গবেষণা করতে গিয়ে ড. মালা খান লক্ষ্য করেন পণ্যের গুণগত মান নির্ণয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণাগারগুলোর অবস্থা হতাশাব্যঞ্জক। অথচ দেশে এই গবেষণাগারের গুরুত্ব অনেক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দেশীয় বোতলজাত পানির গুণগতমান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এই গবেষণা ফলাফল ২০০৩ সালে বই আকারে প্রকাশ করে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স। এ প্রসঙ্গে ড. মালা খান বলেন, আমাদের দেশে কেমিক্যাল মেট্টোলজি অবকাঠামো না থাকায় পণ্যের গুণগতমান সংক্রান্ত পরীক্ষা সঠিক প্রমাণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এর ফলে দেশীয় পণ্য বিদেশে বাজারজাতকরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বছরকয়েক আগে ২০০৭ সালে গুঁড়া দুধে মেলামাইনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। গুঁড়া দুধে মেলামাইনের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশে তা পরীক্ষণ করার রিট জারি করা হয়। কয়েকটি গবেষণাগারে এর পরীক্ষণ করা হয়। একেকটি গবেষণাগারে একেকরকম ফল পাওয়া যায়। এরপর এই পরীক্ষণের জন্য থাইল্যান্ড এর একটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। এই বিষয়টি গভীরভাবে আমাকে নাড়া দেয়। আমাদের দেশে কেমিক্যাল মেট্টোলজি অবকাঠামো গবেষণাগার থাকলে থাইল্যান্ডে যেতে হতো না। এই সমস্যা দূর করতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কেমিক্যাল মেট্টোলজি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন পূরণে কেমিক্যাল মেট্টোলজি অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে ২০০৭ সালে প্রস্তাব দিই। ইন্সট্রু–মেন্টেশন অ্যান্ড কেলিব্রেশন সার্ভিস ল্যাবরেটরি’র (আইসিএসএল) জন্য প্রজেক্ট কনসেপ্ট তৈরি করি। এই কনসেপ্টের ভিত্তিতে সরকার ‘ডেভেলপমেন্ট অব আইএসও ১৭০২৫ অ্যাক্রিডিটেড ইন্সট্রু–মেন্টেশন অ্যান্ড কেলিব্রেশন সার্ভিস ল্যাবরেটরি ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনাধীন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)-এর আওতায় বিজ্ঞানের নতুন শাখা কেমিক্যাল মেট্টোলজির যাত্রা শুরু হয়। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হয় আমাকে। পরে সরকার এর নামকরণ করে ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের এটি প্রথম এবং একমাত্র সংস্থা।
এখানেই থেমে থাকেননি ড. মালা খান। বাংলাদেশের পণ্যের মান নির্ণয়ের মানোন্নয়ন আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি কেমিক্যাল মেট্টোলজি সংক্রান্ত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এশিয়া প্যাসিফিক মেট্টোলজি প্রোগ্রাম ও ডিআরআইসিএম এর সদস্যপদ লাভ করেন। ডিআরআইসিএম যুক্ত হয় বিশ্বের ৩৯টি দেশের মেট্টোলজি নেটওয়ার্কের সঙ্গে। এর ফলে ডিআরআইসিএম-এর পরীক্ষণ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। সম্প্রতি জারিকৃত জাতীয় গুণমান নীতি ২০১৫তেও ডিআরআইসিএমকে ডেজিগনেটেড ইন্সটিটিউট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি বিআইপিএম এর দুটি কারিগরী কমিটি ওয়ার্কিং গ্রুপ অন অর্গানিক এনালাইসিস ও ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইনঅর্গানিক এনালাইসিস এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গবেষণার পাশাপাশি ড. মালা খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘ন্যাশনাল স্ট্রেটেজি ফর ডেভেলপিং কেমিক্যাল মেট্টোলজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার অব বাংলাদেশ (২০০৯-২১)’। ড. মালা খান কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে মেট্টোলজি সংক্রান্ত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় শীর্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৫ সালে এপিএমপি ডেন অ্যাওয়ার্ড।
গবেষণা কর্মে এই অর্জন সম্পর্কে নিজের অনুভূতি বলতে গিয়ে ড. মালা খান বলেন, ‘ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস’-এর গবেষণা কর্ম পরিচালনা করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে আমি নারী। কিন্তু আমার পরিবার আমাকে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে। সেভাবেই লালন করেছে। পরিচর্যা করেছে। পারিবারিক সহযোগিতা পাওয়ার কারণে কর্মস্থলে অনেক বাধা পেরিয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছি। সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তা না হলে হয়তো এতটা পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব হতো না। সমস্যা থাকবেই, সমস্যা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই আমার কাজের মূল লক্ষ্য।
ডা. মালা খান বেড়ে ওঠেন ঢাকায়। বাবা আবুল ফজল খান একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক। মা চামেলী বেগম গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। ঢাকার ধানমণ্ডির কাকলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ১৯৯২ সালে, বদরুন নিসা সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এইচএসসি পাস করেন।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পারিবারিক সহযোগিতা সম্পর্কে ড. মালা খান জানান, বিয়ের পর স্বামীর উৎসাহে পড়াশোনা ও গবেষণা কর্ম চালিয়ে যান। তিন মেয়ের মধ্যে বড় ও মেজ মেয়ে স্কুলে পড়ে। মেয়েরাও এখন বোঝে মা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। ওরাও তাকে সহযোগিতা করেন।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ০৯ অক্টোবর, ২০১৭, দেখুন: https://old-epaper.jugantor.com/2017/10/09/index.php -এর পেইজ-১৩-তে
সম্পাদক ও প্রকাশক
শেখ জাহিদ হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক
আলহাজ্ব শেখ সিদ্দিকুর রহমান
বার্তা সম্পাদক
তাকছিমুন নাহার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
ইঞ্জিনিয়ার কে এম মেহেদী হাসান |
মোবাইল: ০১৭১১২৪৯৭৭০
হোয়াটস্অ্যাপ: ০১৭১১২৪৯৭৭০
প্রধান কার্যালয় মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
|
প্রিন্টের তারিখ ও সময়: October 9, 2024, 5:01 pm