রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের অবিচ্ছেদ্য অংশ

জাতীয় ঐক্য সরকারের বিবৃতি

  বিশেষ প্রতিনিধি    27-08-2023    99
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের অবিচ্ছেদ্য অংশ

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে উল্লেখ করেছে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার। একইসঙ্গে তারা বলেছে, তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতার ষষ্ঠ বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার দেশটির জাতীয় ঐক্য সরকারের দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।

এতে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত ভয়াবহ নৃশংসতার ষষ্ঠ বার্ষিকী অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে স্মরণ করছে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার।

বিবৃতিতে বলা হয়, হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা ও গুম করা হয়। রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের ভয় দেখাতে, আতঙ্কিত করতে ও শাস্তি দিতে দলবদ্ধ ধর্ষণসহ ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতাকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয়। শত শত গ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জীবন ধ্বংস ও ইতিহাস মুছে ফেলা হয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই অপরাধগুলোকে গণহত্যার সমতুল্য বলে উল্লেখ করে।

জাতীয় ঐক্য সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১০ লাখের বেশি মানুষ শুধুমাত্র তাদের গ্রাম ও বাড়ি থেকেই নয়, যে দেশটি তাদের সেই দেশ থেকেও বাস্তুচ্যুত হয়ে আছে। বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরসহ শরণার্থী হিসেবে অনেকে সংকট ও গভীর দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। মিয়ানমারে নিজেদের বাড়ি ও জীবিকায় ফেরার কোনো সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক রোহিঙ্গা ধোঁকায় পড়ে আবার সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছে, যার মাধ্যমে তারা তাদের জীবন পাচারকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এতেই বোঝা যায় তারা কতটা মরিয়া।

এতে বলা হয়, জাতীয় ঐক্য সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে পরিচালিত বর্জনীয় এবং বৈষম্যমূলক নীতি, কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যকে আমরা অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করছি। এসব কথা ও কর্মকাণ্ড সামরিক নৃশংসতার ভিত্তি তৈরি করে এবং এর পরে পাওয়া দায়মুক্তি সামরিক নেতাদের একটি অবৈধ জান্তার নেতৃত্বে দেশব্যাপী অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহিত করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐক্য সরকার রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায়কে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই উপায়ে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এতে বলা হয়, আমরা সামাজিক পরিবর্তন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করে বৈষম্যমূলক আইনগুলোর সম্পূর্ণ সংশোধনের জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারি নীতি ও কর্মসূচি এবং আইন পুনর্গঠনে রোহিঙ্গাদের মতামত যাতে প্রতিফলতি হয় তা নিশ্চিত করতে একজন রোহিঙ্গা নেতা এখন মানবাধিকার বিষয়ক উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ছাড়াও জাতীয় ঐক্য সরকার ঐতিহাসিক ও অব্যাহত সামরিক নৃশংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- একথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সত্য বলা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের প্রকৃত অবস্থা ও মাত্রাকে স্বীকার করা এবং অস্বীকারের ইতিহাসের অবসান ঘটানোও অপরিহার্য। আমরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতা ব্যবস্থার সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার অঙ্গীকার করছি।

এতে আরও বলা হয়, মিয়ানমারের নতুন জাতীয় গণতন্ত্র সনদ শান্তি, ন্যায়বিচার, সমতা, মানবাধিকার ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি জাতির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। আমরা মিয়ানমারের সকল জাতি, ধর্ম, সামাজিক গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের জনগণকে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে পরিণত করার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগদানের আহ্বান জানাই।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। এরপর অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ওই বছরের ১৬ এপ্রিল সু চিকে স্টেট কাউন্সিলর করে জাতীয় ঐক্যর সরকার গঠন করেন। এই সরকার মূলত দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এবং নির্বাসিত থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সারাদেশ-এর আরও খবর