ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সদস্যদের জন্য গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি অর্থনীতি ও বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিকতা শীর্ষক দুদিনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে সার্টিফিকেটের পাশাপাশি একটি খামের মধ্যে কিছু সম্মানীও দেয়া হয়। তা খুলে দেখা যায়, মাত্র ৫টি নোটের জন্যও স্ট্যাপলার পিন ব্যবহার হয়েছে।
পিআইবির কর্মকর্র্তারা সচেতনতার অভাব কিংবা অজ্ঞতা থেকে হয়তো এই কাজটি করেছেন। কিন্তু যারা প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহকের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেন, সেই ব্যাংক কর্মকর্তারাও জেনে-শুনেই টাকার ওপর দেদার পিন ও সিল মারছেন। এ ছাড়াও বান্ডিলে সবার ওপরের নোটটিতে পরিমাণ উল্লেখ করতে বাংলা ও অঙ্কে লেখালেখিও করছেন।
গতকাল রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত বেসরকারি ইউসিবি ব্যাংকের শাখায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে লেনদেনকালে ৫০০ টাকার একটি বান্ডিলে স্ট্যাপলার পিনের ব্যবহার করেন সংশ্লিষ্ট ক্যাশ কর্মকর্তা। এর আগেও রাজধানীর মতিঝিল ও দিলকুশায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বান্ডিলে বারবার স্ট্যাপলিংয়ের কারণে ছিদ্র হয়ে নোট দ্রুত নষ্ট ও অপ্রচলনযোগ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া লেখালেখি, সিল স্বাক্ষর ও ভাঁজ করার কারণেও নোট দ্রুত নষ্ট হয়। এতে প্রতিবছর অপ্রচলনযোগ্য নোটের সমপরিমাণ নতুন নোট ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে অর্থনীতির আকার ও চাহিদা বৃদ্ধিতেও নতুন নোট ছাপানোর প্রয়োজন হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। প্রতিবছর গড়ে এই ব্যয়ের পরিমাণ ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, লেনদেনকালে জালটাকা প্রতিরোধসহ যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বান্ডিলে স্ট্যাপলার পিনের ব্যবহার করেন তারা। তবে টাকার বান্ডিলে পিনের কারণে ভোগাান্তিতে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, টাকার ওপর কোনো ধরনের সিল মারা ও লেখালেখি করা যাবে না। সেই সঙ্গে ১ হাজার টাকার নোট ছাড়া বাজারে প্রচলিত অন্য সব মূল্যমানের নোটে কোনো ধরনের স্ট্যাপলিং করা যাবে না। এ ছাড়া প্রতিটি প্যাকেটে নোটের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে প্যাকেট ব্যান্ডিং করার পর সংশ্লিষ্ট শাখার নাম, সিল, নোট গণনাকারীর স্বাক্ষর ও তারিখ সংবলিত লেবেল বা ফ্লাইলিফ লাগানোর বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে সর্বশেষ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা মানছে না কোনো ব্যাংকই।
গতকাল এই প্রতিবেদক নিজেই এ ধরনের ভোগান্তির স্বীকার হয়েছেন। ইউসিবির ওই শাখায় চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনকালে এই প্রতিবেদক পুরো টাকাই ৫০০ টাকার নোটে দিতে বলেন। এ সময় প্রতিবেদকের সামনেই বান্ডিলে পিন মারেন ওই শাখার ক্যাশ কাউন্টারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। টাকায় পিন মারছেন এমন প্রশ্ন করতেই ওই কর্মকর্তা বলতে থাকেন, ‘পিন না মারলে হবে। পিন তো মারতেই হবে। তবে আপনি না চাইলে মারব না।’ ততক্ষণে পিন মারা হয়ে গেছে। এ সময় পাশে বসা অপর কর্মকর্তা বলেন, ‘পিন মারার নিয়ম নেই এটা কে বলেছে। ১০০০ টাকায় পিন মারা বাধ্যতামূলক। তবে ৫০০ টাকা নোটে পিন মারার বিষয়টি কাস্টমারের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল।’ কিন্তু ওই কর্মকর্তাকে নিষেধ করার পরও এই প্রতিবেদকের বান্ডিলে পিন মারেন।
পরে ওই পিন খুলতে গিয়ে অসুবিধায় পড়তে হয়। পিন টানাটানি করে খোলা যাচ্ছিল না। পরে প্রতিবেদকের অনুরোধে ওই কর্মকর্তা খুলে দেন। টাকা গণনার সময় দুটি ৫০০ টাকার নোট ছেঁড়াফাটা পাওয়া যায়, যেটি পিনের কারণে প্রথমে দেখা যায়নি। এ ছাড়া বান্ডিল খুলে বেশ কয়েকটি নোটে সিল ও লেখালেখি দেখতে পাওয়া যায়। তবে এসব সিল ও লেখালেখি ঠিক কোন ব্যাংকের কোন শাখা থেকে দেওয়া হয়েছে সেটি জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক আমাদের সময়কে বলেন, নোটে পিন, সিল ও লেখালেখি পরিহারের বিষয়ে আমরা সব সময়ই বলে আসছি। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনাও দিয়েছি। তারপরও সচেতনতার অভাব প্রতিটা পর্যায়েই থাকে। তিনি মনে করেন, সচেতনতাই নোটের স্থায়িত্ব বাড়াতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, টাকার ওপর লাল, নীল, কালোসহ বিভিন্ন কালিতে লিখনের মাত্রা বাড়ছে এবং এ লেখালেখিতে ব্যাংকারদের ভূমিকাই মুখ্য। এ ছাড়া সব মূল্যমানের পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটগুলো ময়লা ও অচল হয়ে যাচ্ছে এবং স্ট্যাপলিংয়ের কারণে নোটের স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে।
এদিকে নতুন নোট ছাপাতে প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর এ খরচের পরিমাণ ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। প্রতিবছর এ খরচ বাড়ছে। কারণ টাকা তৈরির কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। বিদেশে এ ধরনের পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি সময়ে ডলারের দামও ব্যাপক বেড়েছে। এ বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, আগে প্রতিবছর টাকা ছাপানোর খরচ ৫০০ কোটি টাকার বেশি ছিল। এখন সেটি কমে ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকার মধ্যে এসেছে।
টাকার গায়ে পিন, সিল লেখালেখি থামছে না
ছিদ্র ও ময়লা হয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নোট । নতুন টাকা ছাপাতে প্রতিবছর ব্যয় বাড়ছে
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সদস্যদের জন্য গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি অর্থনীতি ও বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিকতা শীর্ষক দুদিনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে সার্টিফিকেটের পাশাপাশি একটি খামের মধ্যে কিছু সম্মানীও দেয়া হয়। তা খুলে দেখা যায়, মাত্র ৫টি নোটের জন্যও স্ট্যাপলার পিন ব্যবহার হয়েছে।
পিআইবির কর্মকর্র্তারা সচেতনতার অভাব কিংবা অজ্ঞতা থেকে হয়তো এই কাজটি করেছেন। কিন্তু যারা প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহকের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেন, সেই ব্যাংক কর্মকর্তারাও জেনে-শুনেই টাকার ওপর দেদার পিন ও সিল মারছেন। এ ছাড়াও বান্ডিলে সবার ওপরের নোটটিতে পরিমাণ উল্লেখ করতে বাংলা ও অঙ্কে লেখালেখিও করছেন।
গতকাল রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত বেসরকারি ইউসিবি ব্যাংকের শাখায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে লেনদেনকালে ৫০০ টাকার একটি বান্ডিলে স্ট্যাপলার পিনের ব্যবহার করেন সংশ্লিষ্ট ক্যাশ কর্মকর্তা। এর আগেও রাজধানীর মতিঝিল ও দিলকুশায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বান্ডিলে বারবার স্ট্যাপলিংয়ের কারণে ছিদ্র হয়ে নোট দ্রুত নষ্ট ও অপ্রচলনযোগ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া লেখালেখি, সিল স্বাক্ষর ও ভাঁজ করার কারণেও নোট দ্রুত নষ্ট হয়। এতে প্রতিবছর অপ্রচলনযোগ্য নোটের সমপরিমাণ নতুন নোট ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে অর্থনীতির আকার ও চাহিদা বৃদ্ধিতেও নতুন নোট ছাপানোর প্রয়োজন হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। প্রতিবছর গড়ে এই ব্যয়ের পরিমাণ ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, লেনদেনকালে জালটাকা প্রতিরোধসহ যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বান্ডিলে স্ট্যাপলার পিনের ব্যবহার করেন তারা। তবে টাকার বান্ডিলে পিনের কারণে ভোগাান্তিতে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, টাকার ওপর কোনো ধরনের সিল মারা ও লেখালেখি করা যাবে না। সেই সঙ্গে ১ হাজার টাকার নোট ছাড়া বাজারে প্রচলিত অন্য সব মূল্যমানের নোটে কোনো ধরনের স্ট্যাপলিং করা যাবে না। এ ছাড়া প্রতিটি প্যাকেটে নোটের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে প্যাকেট ব্যান্ডিং করার পর সংশ্লিষ্ট শাখার নাম, সিল, নোট গণনাকারীর স্বাক্ষর ও তারিখ সংবলিত লেবেল বা ফ্লাইলিফ লাগানোর বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে সর্বশেষ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা মানছে না কোনো ব্যাংকই।
গতকাল এই প্রতিবেদক নিজেই এ ধরনের ভোগান্তির স্বীকার হয়েছেন। ইউসিবির ওই শাখায় চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনকালে এই প্রতিবেদক পুরো টাকাই ৫০০ টাকার নোটে দিতে বলেন। এ সময় প্রতিবেদকের সামনেই বান্ডিলে পিন মারেন ওই শাখার ক্যাশ কাউন্টারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। টাকায় পিন মারছেন এমন প্রশ্ন করতেই ওই কর্মকর্তা বলতে থাকেন, ‘পিন না মারলে হবে। পিন তো মারতেই হবে। তবে আপনি না চাইলে মারব না।’ ততক্ষণে পিন মারা হয়ে গেছে। এ সময় পাশে বসা অপর কর্মকর্তা বলেন, ‘পিন মারার নিয়ম নেই এটা কে বলেছে। ১০০০ টাকায় পিন মারা বাধ্যতামূলক। তবে ৫০০ টাকা নোটে পিন মারার বিষয়টি কাস্টমারের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল।’ কিন্তু ওই কর্মকর্তাকে নিষেধ করার পরও এই প্রতিবেদকের বান্ডিলে পিন মারেন।
পরে ওই পিন খুলতে গিয়ে অসুবিধায় পড়তে হয়। পিন টানাটানি করে খোলা যাচ্ছিল না। পরে প্রতিবেদকের অনুরোধে ওই কর্মকর্তা খুলে দেন। টাকা গণনার সময় দুটি ৫০০ টাকার নোট ছেঁড়াফাটা পাওয়া যায়, যেটি পিনের কারণে প্রথমে দেখা যায়নি। এ ছাড়া বান্ডিল খুলে বেশ কয়েকটি নোটে সিল ও লেখালেখি দেখতে পাওয়া যায়। তবে এসব সিল ও লেখালেখি ঠিক কোন ব্যাংকের কোন শাখা থেকে দেওয়া হয়েছে সেটি জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক আমাদের সময়কে বলেন, নোটে পিন, সিল ও লেখালেখি পরিহারের বিষয়ে আমরা সব সময়ই বলে আসছি। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনাও দিয়েছি। তারপরও সচেতনতার অভাব প্রতিটা পর্যায়েই থাকে। তিনি মনে করেন, সচেতনতাই নোটের স্থায়িত্ব বাড়াতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, টাকার ওপর লাল, নীল, কালোসহ বিভিন্ন কালিতে লিখনের মাত্রা বাড়ছে এবং এ লেখালেখিতে ব্যাংকারদের ভূমিকাই মুখ্য। এ ছাড়া সব মূল্যমানের পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটগুলো ময়লা ও অচল হয়ে যাচ্ছে এবং স্ট্যাপলিংয়ের কারণে নোটের স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে।
এদিকে নতুন নোট ছাপাতে প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর এ খরচের পরিমাণ ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। প্রতিবছর এ খরচ বাড়ছে। কারণ টাকা তৈরির কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। বিদেশে এ ধরনের পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি সময়ে ডলারের দামও ব্যাপক বেড়েছে। এ বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, আগে প্রতিবছর টাকা ছাপানোর খরচ ৫০০ কোটি টাকার বেশি ছিল। এখন সেটি কমে ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকার মধ্যে এসেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
শেখ জাহিদ হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক
আলহাজ্ব শেখ সিদ্দিকুর রহমান
বার্তা সম্পাদক
তাকছিমুন নাহার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
ইঞ্জিনিয়ার কে এম মেহেদী হাসান |
মোবাইল: ০১৭১১২৪৯৭৭০
হোয়াটস্অ্যাপ: ০১৭১১২৪৯৭৭০
প্রধান কার্যালয় মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
|
প্রিন্টের তারিখ ও সময়: October 9, 2024, 3:25 pm