ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলার পরিকল্পনা, হুজির ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

  বিশেষ প্রতিনিধি    28-01-2023    209
ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলার পরিকল্পনা, হুজির ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) এর ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন এর ডিজিটাল ফরেনসিক দল।

এরা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সুরুজ্জামান, হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. দীন ইসলাম এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। এদের ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে হুজি আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফখরুল ইসলাম বিদেশ থেকে জঙ্গি বিষয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের সক্রিয় সদস্য। তিনি ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। ১৯৮৮ সালেই তিনি কাজের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের করাচী যান। পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি জাকির হোসেনের সাথে পরিচয় হয়।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদী ট্রেনিং এর কমান্ডার। তিনি জিহাদের দাওয়াত দিলে ফখরুল ইসলাম সে দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল জিহাদী ট্রেনিং-এ অংশ নিতে মুফতি জাকিরের সাথে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘ প্রশিক্ষণে যান। বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র- একে ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শিখেন। ট্রেনিং এর সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। প্রশিক্ষন এলাকায় ফখরুল একে ৪৭ সহ ৪ ঘণ্টা করে নিরাপত্তা ডিউটি করতেন। ওই সময়ে তিনি আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সাথে একাধিকবার সাক্ষাতও করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদী ট্রেনিং করার পর পুনরায় পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন।

করাচী থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর করাচীতে ফিরে এসে তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন। দেশে জঙ্গি বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। তাই দেশে এসে ফখরুল জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তিনি অত্যাধুনিক সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম অ্যানক্রিপটেড অ্যাপস ‘ইরচ’ ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সাথে উগ্রবাদী ও আক্রমনাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান করেন। যেকোন সময় বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন।

মো. আসাদুজ্জামান জানান, তিনি বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবন পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণেরও পরিকল্পনা করেন। তিনি ও তার ছেলে আটককৃত সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার যান। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সদস্য রিক্রুটে মোটা অংকের টাকা অনুদানও দেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সিকিউরড অ্যানক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে “মোরা সত্যের সৈনিক”, “অস্থায়ী মুসাফির” ছদ্মনামে গ্রুপটি পরিচালনা করছিলেন। এই অ্যাপস এর প্রাইভেট চ্যানেলে “একটু প্রস্তুতির” কনটেন্ট হিসেবে “একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে” শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানোর বাংলা বিবরনীসহ ভিডিও শেয়ার করেছেন। মামুন চ্যানেল থেকে তার সংগঠনের পরিচিতদের বোমা বানানোর নির্দেশনাও দেন।

জাতীয়-এর আরও খবর