বিএনপি-আ.লীগের তুলনামূলক চিত্র দিলেন প্রধানমন্ত্রী

  বিশেষ প্রতিনিধি    23-06-2023    92
বিএনপি-আ.লীগের তুলনামূলক চিত্র দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রবৃদ্ধি থেকে মাথাপিছু আয়, জিডিপি থেকে বাজেটের আকার বৃদ্ধিসহ বিএনপি সরকারের তুলনায় আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সার্বিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে দুটি সময়ের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে প্রবৃদ্ধি ছিলো ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। আমরা করোনাকালেও ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ আনতে পেরেছি। তবে গড়ে ৬ ভাগে আমরা রাখতে পেরেছি।

মাথাপিছু আয়: বিএনপির সময়ে ছিলো ৫৪৩ মার্কিন ডলার। এখন তুলেছিলাম ২৮২৫ ডলার। এই মুদ্রাস্ফীতি ও ডলারের দামের কারণে সেটা এখন ২৭৬৫ মার্কিন ডলার। তারপরেও বলবো পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করতে পেরেছি বিএনপি থেকে। এটা হচ্ছে সাধারণ। আর পিপিতে মাথাপিছু আয় যেখানে ১৭২৪ মার্কিন ডলার ছিলো, এখন সেটা ৭৮৮৯।

মূল্যস্ফীতি: মূল্যস্ফীতি আমরা ২০০১ সালে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি তখন ১ দশমিক ৫ ভাগ রেখে এসেছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা ১০ শতাংশে বৃদ্ধি করে। আমরা আবার ক্ষমতায় এসে সেটা ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে আবার সেই মুদ্রাস্ফীতি এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটা ৮ থেকে ৯ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা কমিয়ে আনার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি।

বাজেটের আকার: বিএনপির আমলে বাজেট ছিলো ৬১ হাজার কোটি টাকা। এ বছর আমরা ৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। যখন বিশ্বব্যাপী মন্দা তখনও কিন্তু আমরা বাজেট কমাইনি। বিএনপির আমল থেকে আমরা বাজেট ১০ গুণ বৃদ্ধি করেছি।

জিডিপির আকার: ৪ লাখ ১৫ হাজার ৭২ কোটি টাকা বিএনপির আমলে ছিলো ২০০৬ সালে। সেটা ৫০ দশমিক ৩১ লক্ষ কোটি টাকা অর্থাৎ ১২ গুণ বৃদ্ধি করতে পেরেছি আমরা।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি: বিএনপি আমলে ছিল ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর আওয়ামী লীগের আমলে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা অর্থাৎ ১৩ গুণ আমরা বৃদ্ধি করেছি।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ: বিএনপির আমলে ছিলো ০ দশমিক ৭৪ যা এক বিলিয়নও না। আর আওয়ামী লীগ ৪৮ বিলিয়নে তুলেছিলো। এখন তা ৩০ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রিজার্ভটা হিসাব করা হয় এই কারণে, কোনও আপদকালীন সময়ে যদি খাদ্যাভাব দেখা দেয় তাহলে অন্তত তিন মাসের খাবার যেন কেনা যায় বাইরে থেকে- সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখা হয়।

এখন তিন মাস না, পাঁচ মাসই খাবার কিনতে পারবো। আমি ইতোমধ্যে সবাইকে আহ্বান করেছি খাবার আর বাইরে থেকে কিনতে হবে না। আমরা নিজেরাই উৎপাদন করবো। নিজেদের চাহিদা মেটাবো। প্রয়োজনে আমরা বিদেশেও পাঠাবো।

রপ্তানি আয়: বিএনপির সময়ে ছিলো ১০ দশমিক ০৫ বিলিয়ন। ২০২৩ আওয়ামী লীগের আমলে ৫২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ পাঁচ গুণ আমরা বৃদ্ধি করেছি।

রেমিট্যান্স: বিএনপির আমলে ছিলো ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এখন ২৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমদানি আয়: ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ছিলো বিএনপি সময়ে। এখন তা ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

বিনিয়োগ জিডিপি: বিনিয়োগ জিডিপি ৩২ দশমিক ০৫ শতাংশে বাড়াতে পেরেছি। বিএনপির আমলে যা ছিলো মাত্র ২২ শতাংশ।

বার্ষিক রাজস্ব আয়: যেখানে মাত্র ৩৭ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা ছিলো বিএনপির আমলে, সেখানে আওয়ামী লীগের সময়ে ৫ লক্ষ কোটি টাকা আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছি।

দারিদ্রের হার: যেখানে বিএনপির সময়ে দারিদ্রের হার ৪২ দশমিক ৫১ শতাংশ ছিলো, সেটা ১৮ দশমিক ৭-এ নেমে এসেছি। যদি কোভিড আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হতো তাহলে এটা অন্তত পক্ষে আরও দুই ভাগ নামানোর পরিকল্পনা ছিলো। তাহলে আমরা অনেক বড় উন্নত দেশের চেয়ে দারিদ্র্যের হার কমাতে পারতাম।

অতি দারিদ্র্য: বিএনপি আমলে এই হার ছিলো ২৫ দশমিক ১ শতাংশ, আমরা সেটা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশা আল্লাহ দেশে কেউ হতদরিদ্র থাকবে না, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

মানুষের গড় আয়ু: মানুষের গড় আয়ু বিএনপির সময়ে ছিলো ৬০ বছর, এখন তা ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।

শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃ মৃত্যুহার: শিশু মৃত্যুহার বিএনপি সময়ে প্রতি হাজারে ছিলো ৮৪ জন। আওয়ামী লীগ সেটা ২১ জনে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। মাতৃ মৃত্যুহার প্রতি লাখে ছিলো ৩৭০ জন, সেটা এখন ১৬১ জনের নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।

স্যানিটারি ল্যাট্রিন: বিএনপি সময়ে ছিলো ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। সেটা এখন অর্জন করেছি ৯৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

সুপেয় পানি: বিএনপির সময়ে মাত্র ৫৫ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পেতো। এখন তা ৯৮ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে।

বিদ্যুৎ: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বিএনপির আমলের ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিলাম। সেটা বিএনপি কমিয়ে নিয়ে এসেছিলো ৩ হাজার ৭৮ মেগাওয়াটে। সবসময় মানুষ বাড়ায় আর বিএনপি কমায়। সেখান থেকে এখন ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি।

বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী: বিএনপির আমলে বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৮ ভাগ। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি, প্রতি ঘরে ঘরে আলো দিতে সক্ষম হয়েছি।

শিক্ষা: শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা একটা নীতিমালা প্রণয়ন করি। তার আলোকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেমন মাদ্রাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। সারা দেশের মানুষ যাতে শিক্ষা পায় সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। ’৯৬ সালে একটা প্রকল্প নিয়েছিলাম, বয়স্ক শিক্ষা ৪৫ বছরের মধ্যে যারা তারাও যাতে শিক্ষা পায়। একেকটা জেলা আমরা নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করেছিলাম।

বিএনপি সরকার এসে সেটা বন্ধ করে দেয়। আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সেটা আমার চালু করেছি। শিক্ষার হার ৪৫ থেকে আমরা ৬৫ ভাগে নিয়েছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটা কমিয়েছে।

অবশ্য সেটা কমাবেই, কারণ খালেদা জিয়া তো মেট্রিক পাস করতে পারেনি। উর্দু আর অংকতে পাস করেছিল। তার স্বামী ছিল মেট্রিক পাস আর ছেলে যে কী পাস, তা কেউ বলতে পারে না। প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার ছিলো ৪৯ শতাংশ। সেটা কমিয়ে ১৩ দশমিক ১৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা ছিলো ৫১ হাজার ৫৫ জন। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৮৯ হাজার ৯০৬ জন।

কারিগরি শিক্ষা: ০ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা নিত। আমরা সেটা ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করেছি। আমরা কারিগরি শিক্ষা ও ভোকেশনাল ট্রেনিংকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা চাই, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে। এজন্য সরকার পরিকল্পনা করে প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়: বিএনপির আমলে ছিলো ৬৫ হাজার ৬৭২। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ’৯৬ সালে প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় করে দিয়ে যায়। এই কারণে এটা ৬৫ হাজারে উন্নীত হয়েছিলো। তারা আর বাড়ায়নি স্কুল। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে এখন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি বিদ্যালয় করেছি। এখন আর কোনও এলাকা বাদ নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৯ জনের জায়গায় এখন ৬ লাখ ৫৭ হাজার ২০৩ জন শিক্ষক আছেন।

এ ছাড়া, কৃষি, প্রযুক্তি ক্ষেত্র, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিএনপির সরকারের তুলনায় বর্তমান যুগান্তকারী উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয়-এর আরও খবর