তিস্তা প্রকল্প ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর: চীনা রাষ্ট্রদূত

  বিশেষ প্রতিনিধি    05-11-2022    162
তিস্তা প্রকল্প ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর: চীনা রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, চীন তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। তবে আমরা বুঝতে পারি তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের ওপর বাইরের চাপ আছে। কেন না এই প্রকল্প ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর।

শনিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেস নিয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ-চীন সিল্ক রোড ফোরাম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বাংলাদেশ-চীন সিল্ক রোড ফোরামের চেয়ারম্যান দিলীপ বড়ুয়া সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।

সেমিনারে চীনা রাষ্ট্রদূত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশে পানি সমস্যা সমাধানে তিস্তা প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদেরও অনেক নদী রয়েছে। চীন হাজার বছর ধরে পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত।

লি জিমিং বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকার আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা গ্রহণ করেছি। এখন এটা নিয়ে সমীক্ষা চলছে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি আঞ্চলিক ইস্যু। এই সংকটের মধ্যস্থতা করছে চীন। তবে এখানে অনেক পক্ষ জড়িয়ে গেছে। কোনো কোনো পক্ষ গঠনমূলকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না। আর চীনের প্রধান লক্ষ্যই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

লি জিমিং বলেন, চীন এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে। চীন এ বিষয়ে সবাইকে জানিয়ে কাজ করার পক্ষে নয়। চীন নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাইব, রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যায়।

রাষ্ট্রদূত বলেন, সমস্যার সমাধান দ্বিপাক্ষিকভাবে হওয়া উচিত। যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু হোক, এটিই চীনের চাওয়া।

রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ৯ কোটি ৬০ লাখ সদস্য রয়েছে। এটা বিশ্বের সব চেয়ে বড় পার্টি। এবারের কংগ্রেস এই পার্টির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছে। এই নেতৃত্বে রয়েছেন শি জিন পিং। মার্ক্সবাদকে ভিত্তি করেই চীন এগিয়ে চলেছে। সিপিসি মার্ক্সবাদের মূল ভিত্তি ধারণ করে।

ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে আগ্রহী চীন। এই যুদ্ধের ফলে এশিয়ানরাও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কেন না দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। তবে চীন কোনো যুদ্ধ চায় না। শান্তি চায়।

তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের কৌশলগত বন্ধু। বাংলাদেশকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত চীন।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন গণতন্ত্রকে মূল্য দেয়। তবে শুধু ভোট দেওয়াটাই গণতন্ত্র নয়। আমরাও গণতন্ত্র চর্চা করি।

লি জিমিং বলেন, চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করবে না৷ আমরা এখানের সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থিতিশীলতা চাই।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেন, চীন বর্তমানে তার শক্তি বাড়িয়ে চলছে। তবে চীন কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তারা শান্তি চায়। আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে জ্বালানি সংকট শুরু হয়েছে। চীন এই যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করে সমাধান চাইছে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চীন প্রধান বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখবে।

জাতীয়-এর আরও খবর