ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এবং ঢাবির কমিটিতে জনপ্রিয় ছাত্রনেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ

  বিশেষ প্রতিনিধি    15-09-2022    152
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এবং ঢাবির কমিটিতে জনপ্রিয় ছাত্রনেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ

গত ১১ সেপ্টেম্বর(২০২২) রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ঘোষিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটিতে জনপ্রিয় ছাত্রনেতাদের কে অবমূল্যায়নের অভিযোগ উঠেছে। পাঁচ মাস আগে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ কে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েল কে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। আংশিক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই মাঠে ময়দানে সক্রিয় ছিলেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কয়েক দফা হামলার শিকার হলেও রাজপথে এবং আদালতে ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের সাথে লড়াই চালিয়ে গেছেন। সামনে সরকার বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য দল কে প্রস্তুত করতে বিএনপির অঙ্গসংগঠন গুলো কে সাজাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। সেই ধারাবাহিকতায় একমাস আগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছিল। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের আংশিক কমিটির সাথে আলাপ- আলোচনা করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ কে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছেন।একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় ‌‌।ঢাবি শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল আরবী বিভাগের ২০০৮-০৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী। সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আগের কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল , ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম এর মতো জনপ্রিয় ছাত্রনেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ উঠেছে। আজিজুল হক সোহেল এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নয়। এটা সম্পূর্ণ দলের সাংগঠনিক অভিভাবকের বিষয় বলে জানান তিনি। তাদের সমর্থকদের অভিযোগ এঁরা সবাই খোকন- শ্যামল কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন। জনপ্রিয়তাই তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রদলের বিগত রাজীব -আকরাম কমিটির সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক ছাত্র আতাউর রহমান খান। শ্যামল -খোকন কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় গত কমিটির কোন পদে ছিলেন না তিনি। কিন্তু তার সমসাময়িক এসএসসি ব্যাচের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। কমিটি নিয়ে আফসোস করে তিনি বলেন, “যারা কমিটিতে এসেছে ,তারা এ পদের যোগ্য ছিলো। আমারও এই সংগঠনের জন্য রক্ত, শ্রম, ঘাম এবং ত্যাগ ছিলো। কিন্তু সেটার প্রত্যাশিত মূল্যায়ন পাই নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দুই বার ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলাম। শেষবার আইসিইউতে চিকিৎসা নিতে হয়েছিলো। এখনো ডান পায়ের হাঁটুতে ব্যাথা রয়ে গেছে। কমিটি হওয়ার পর নিজের নাম না দেখতে পেরে কষ্ট পেয়েছি। আশাকরি দেশনায়ক তারেক রহমানের কাছে আমাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন পাবো এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিজের জীবনের সর্বোচ্চ বিসর্জন দেব। আতাউর রহমান খান এর মতো জনপ্রিয় আরেক ছাত্রনেতা হাফিজুল্লাহ হিরা । সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদল। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির পদ-প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। তার রাজনৈতিক জীবনে মামলার সংখ্যা ৬ টি, কারাবরণ করেছেন ৪২ দিন। শাহবাগ থানায় ৪ দিন রিমান্ডে ছিলেন। কিন্তু সদ্য ঘোষিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তার কোন পদ -পদবী জুটল না। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ” কমিটিতে আমার সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে কমিটিতে রাখা কিংবা পদায়ন করা হয়নি। আমার কর্মীরা যেখানে নেতা হয়েছে ,আমাকে কেন রাখা হয়নি সেই প্রশ্ন কর্তৃপক্ষের কাছে রাখলাম। তিনি আরো জানান,”চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মাফিয়া সরকারের পতন আরোও বেগবান করতে হলে আমাদের মত ত্যাগী,মেধাবী এবং সাহসী যে সকল নেতৃবৃন্দ কমিটি থেকে বাদ পড়েছে, তাদের কে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। তবে ছাত্রদলের এসব পদবঞ্চিত কয়েকজন নেতাকর্মীর প্রত্যাশা রাজীব -আকরাম কমিটির মতো বর্ধিত কমিটি ঘোষণা করবে বিএনপির হাইকমান্ড।২০১৪ সালে অক্টোবর মাসে রাজীব -আকরাম কমিটি ঘোষণার পরপরই বিদ্রোহ করে বসে ছাত্রদল নেতা ফেরদৌস আলম মুন্না সহ কয়েকশো নেতাকর্মী।পরে ২০১৬ সালে বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের কে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে দলের হাইকমান্ড। ঢাবি ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে ছাত্রদল নেত্রীর মন্তব্যে তোলপাড়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটির ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক কানেতা ইয়া লাম-লাম এর মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সুদর্শন এবং জনপ্রিয় ছাত্রনেত্রী কানেতা ইয়া লাম লাম ছাত্রদলের সাবেক নেতা, নব্বইয়ের ডাকসুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক , সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব এর মেয়ে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৩-১৪ সেশনের ছাত্রী ছিলেন তিনি। তিনি গত ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলে কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পুরো প্যানেলের মধ্যে তিনিই একমাত্র শক্ত প্রতিদ্বন্দিতা করতে পেরেছিলেন। সদ্য ঘোষিত ঢাবি ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কানেতা ইয়া লাম লাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “যারা ইনবক্সে নানা মাধ্যমে আমাকে খুদে বার্তা পাঠাচ্ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি: আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কোন রকম ছাত্রত্ব নাই। আমি আরো আড়াই বছর আগে ঢাবিতে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়েছি। এরপর ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছর দেড়েক শিক্ষকতাও করেছি”। পরে আরেকটা পোস্ট দিয়ে তিনি কিছুটা সংশোধনী আনেন। তিনি বলেন, আমি ছাত্রদলের কেউ নয়— এই কথা বলি নাই।ঢাবিতে ছাত্রত্ব না থাকায় কমিটিতে থাকা মানানসই নয় –এই কথাটি বলতে চেয়েছি। কেন্দ্রীয় কমিটির মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটিতেও বিগত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্মার্ট ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি তারেক হাসান মামুন মতো কর্মীবান্ধব ছাত্রদল নেতাকে অবমূল্যায়নের অভিযোগ উঠেছে। তাদের সমর্থকদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল মূলতঃ “ওয়ানম্যান আর্মি “।তার নিজস্ব কোন কর্মী নাই। আন্দোলনের মাঠে- ময়দানে যে রকম নেতা দরকার, তিনি সে রকম যোগ্যতা অর্জন করতে পারে নি। সাবেক নেতৃবৃন্দের মন্তব্য: সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ছাত্রদলের কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক ছাত্র মফিজুর রহমান আশিক তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, “যে দল তার কর্মীদের সাথে প্রতারণা করে,তাদের রক্ত-ঘাম,জীবন-যৌবনের মূল্য দেয়না সেই দল আদৌ টিকবে কি না সন্দেহ! অভিযোগের বিষয়ে নেতারা যা বললেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল বলেন, “ছাত্রদলে সবসময় আংশিক কমিটি গঠন করা হয়।যাতে বাদ পড়া কর্মীদের কে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকে। রাজপথে আন্দোলনে -সংগ্রামে যারা কষ্ট করেছে এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে, তাদের কে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান , ছাত্রদল দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন। এখানে একেকটা পদের জন্য একশো জন্য পর্যন্ত প্রতিযোগী থাকে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক একটা পদে তো আর দুই জনকে রাখা সম্ভব নয়। আমাদের দলের সাংগঠনিক অভিভাবক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। ছাত্রদলের কমিটি অতীতের মতো বর্ধিত করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ দলের সাংগঠনিক অভিভাবকের বিষয়। দলের প্রয়োজনে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে আবার দলের প্রয়োজনে কাউকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন , আংশিক কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যারা রাজনীতি করবে, তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

জাতীয়-এর আরও খবর