আ.লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

  বিশেষ প্রতিনিধি    10-07-2023    110
আ.লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

সিলেট নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলেই নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়? কিন্তু এটা কী আপনারা দেখেছেন কখনো? আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়? হয় না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।’

আজ রোববার বিকেলে সিলেট নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না। তাদের চরিত্রের মধ্যে সেটা নাই। তাদের চরিত্রের মধ্যে রয়েছে যেটা মনে করে দেশটা তাদের বাপের তালুকদারি, জমিদারি। সেটা আর কারও না, আমরা সব প্রজা। এটাই তারা সব সময় মনে করে।

এ কারণে তারা সব সময় ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বেআইনিভাবে, নির্যাতন, হত্যা, খুন ও গুম করে, নিষ্ঠুরভাবে। বন্ধুগণ আমাদের মনে রাখতে হবে, যে নির্বাচন ব্যবস্থা এই আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে এখানে যারা তরুণ আছে, যুবক আছে; তাদের যদি অধিকার আদায় করতে হয়। তাদের যদি ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর একটি দেশ তৈরি করতে হয়। যেখানে তারা চাকরি পাবে, শিক্ষার সুযোগ পাবে। স্বাস্থ্যের সুযোগ পাবে। তাহলে তাদের এই অবস্থা পরিবর্তন করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু কোন সংবিধান? যে সংবিধান আওয়ামী লীগ নিজেরাই কাটছাঁট করে নিজেদের মতো করেছে। সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চায় তারা। অথচ বাংলাদেশের জনগণ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে-নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিশেষত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তার প্রমাণ গত দুটি নির্বাচনে পাওয়া গেছে। দেশে এখন কারও ভোটাধিকার নেই। জনগণ ভোট দিতে পারে না। ভোটাধিকারের কথা বললে হামলা, নির্যাতন, গুম, খুন করা হয়।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দেশে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। সেখানে আমরা সকলের মত প্রকাশ করব। আমি তোমার সঙ্গে একমত না ও হতে পারি। তোমার কথা বলার যে অধিকার সেটিকে আমি নিশ্চিত করব। সকলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়ার সুযোগ পাবে। মায়েরা চিকিৎসার সুযোগ পাবে। একটা ভালোবাসা-প্রেমের দেশ আমরা গড়ে তুলতে পারব। যে কারণে সেই এমএজি ওসমানী সাহেব যুদ্ধ করেছিলেন।

তিনি তখন কিছুদিন পরই বুঝতে পেরেছিলেন; এই দেশ আর সেই দেশ থাকবে না। যেদিন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব। তিনি সেই দিন পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। যে আমরা এই এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল চাই না। এটা ইতিহাস। আজকে আবার, শেখ হাসিনা একটি ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্নভাবে তিনি আবার ওই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন আমাদের ওপর; তাই না? দুইটা নির্বাচন করেছেন এর আগে; আর নির্বাচনটা হচ্ছে উনাদের জন্য একটা অস্ত্র। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকবার অস্ত্র।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় কথায় উন্নয়নের কথা বলে। অথচ উন্নয়নের নামে তারা লুটপাট করছে। শতভাগ বিদ্যুতের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। সরকারি গবেষণা সংস্থাই বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তিকে অপ চুক্তি ও লুটেরা মডেল বলা হয়েছে। গত এক বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে বলে সরকারি সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আদতে গত দুই বছরে বিদ্যুৎ খাতে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। কেবল বিদ্যুৎ নয়, সবক্ষেত্রেই লুটপাট চলছে। যে পদ্মাসেতু নির্মাণে ১০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন সেটির জন্য ২০ হাজার কেটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। দুর্নীতি করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার কেবল রাস্তাঘাট বানাচ্ছে কিন্তু কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। দেশে লাখ লাখ লোক বেকার। কৃষক ফসলের দাম পায় না। অথচ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। মানুষ খেতে পারছে না। এই হলো আওয়ামী লীগের উন্নয়ন।

১২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যর সমাবেশ করা হবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এই সমাবেশ থেকে সমগ্র তরুণ সমাজ দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছেন। ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশ থেকে বর্তমান সরকারের পদত্যাগে এক দফা কর্মসূচি দেওয়া হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে হটাতে হবে।

-আজকের পত্রিকা

জাতীয়-এর আরও খবর