আমিও চাই বুশরা মুক্ত হোক, তবে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে: ফারদিনের বাবা

  বিশেষ প্রতিনিধি    05-01-2023    139
আমিও চাই বুশরা মুক্ত হোক, তবে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে: ফারদিনের বাবা

একটি মৃত্যু দুটি পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে।বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মা-বাবার স্বপ্ন ছিলো ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু এক মধ্যরাতে সেই স্বপ্ন হারিয়ে যায় অন্ধকারে। ফারদিনের লাশ উদ্ধার হয় বুড়িগঙ্গা থেকে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে, বুশরার বাবার দাবি, তার মেয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার। বিনা অপরাধে তাকে জেলে থাকতে হচ্ছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হয়তো মেয়ে মুক্তি পাবে, কিন্তু এই যন্ত্রণা তাকে সারাজীবন কাঁদাবে। ’

ফারদিনের বাবা বলেন, ‘ছেলে খুন হলেও আত্মহত্যার গ্লানি বইতে হচ্ছে আমাদের। ’

বুশরার প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমিও চাই সে মুক্ত হোক, তবে তাকে প্রমাণ করতে হবে সে নির্দোষ।’

উল্লেখ‌্য, নিখোঁজের তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে গত ৭ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরে ৯ নভেম্বর রাতে তার বাবা নুর উদ্দিন রানা বাদি হয়ে রামপুরা থানায় মামলা করেন। মামলায় নিহতের বান্ধবী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বুশরাসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১০ নভেম্বর তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৬ নভেম্বর রিমান্ড শেষে জামিন নামঞ্জুর করে বুশরা কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে দেড় মাসের অধিক সময় ধরে কারাগারে রয়েছে বুশরা।

এদিকে, এরই মাঝে গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও র‌্যাব জানায়, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন, এর সঙ্গে বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরপর থেকে বুশরার পরিবারে আশার সঞ্চার হয়েছে। নির্দোষ মেয়েকে কাছে পেতে আকুল হয়ে পড়েছে পরিবার।

বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম সবুজ বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি বুশরা ঘটনার সাথে জড়িত না। পুলিশও যাচাই-বাছাই করেছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে, পুলিশ ফারদিনের বাবাকে মামলা করতে নিষেধ করে। বুশরা নির্দোষ। তথ্য-উপাত্ত কোনো কিছুই বুশরার সাথে যায় না। তখন আমরা বলেছিলাম ওকে অবজার্ভে রাখেন। কিন্তু তা না করে ফারদিনের বাবা বুশরাকে আসামি করে মামলা করেছে। পুলিশ তদন্ত করে পেয়েছে, ফারদিন আত্মহত্যা করেছে।

তিনি বলেন, মেয়েটার লাইফটা শেষ করে দিয়েছে। নিরাপরাধ মেয়েটা এতদিন জেলে। মেয়ের স্বাভাবিক জীবন নিয়ে উদ্বিগ্নে আছি। ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে তো। জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো মেয়েটার। ৫ তারিখে ওর জামিন শুনানি আছে। সবাই দোয়া করবেন, ও যেন জামিন পায়। আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বক্তব্যের তীব্র বিরোধীতা করে ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানা বলেন, তদন্তকারী সংস্থা প্রভাবিত হয়ে সরে গেছে। আমার ছেলের ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করে নাই। ওর মধ্যে কোনো ধরনের হতাশা ছিল না। ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেটা ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। ২৩ বছরের ছেলে কেন আত্মহত্যা করবে? কারণ তার মধ্যে কোনো হতাশা ছিল না। পুলিশ বলছে, সে ইনট্রোভার্ট ছিল। যে ছেলে বিতর্ক করতো, উদ্ভাসে ক্লাস নিতো, বুয়েটে নিজের ক্লাসে রিপ্রেজেন করতো সে কেমন করে ইনট্রোভার্ট। বুশরার বিষয়ে জানতে চাইলে নুর উদ্দিন বলেন, আমিও চাই না মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হোক। তাকে প্রমাণ করতে হবে সে ঘটনার সাথে জড়িত না। ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি করেনি। প্রমাণের ভিত্তিকে নির্দোষ হলে সে মুক্ত হবো। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।

বুশরার আইনজীবী হাবিবুর রহমান চুন্নু বলেন, তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে বের করেছে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে। তার মানে বুশরা ঘটনার সাথে জড়িত না। আমরা তিন দফা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তার জামিন আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালত তাকে জামিন দেননি। পরবর্তীতে আমরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন আবেদন করি। ৫ জানুয়ারি জামিন শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। আশা করছি, সার্বিক দিক বিবেচনা করে আদালত তাকে জামিন দিবেন।

জাতীয়-এর আরও খবর