গর্ভবতী থাকলে ছেলের খতনা দেওয়া যাবে কি?

  বিশেষ প্রতিনিধি    03-02-2023    242
গর্ভবতী থাকলে ছেলের খতনা দেওয়া যাবে কি?

আমাদের মুসলিম সমাজে খতনার সংস্কৃতি শত শত বছর ধরে চলে আসছে। আর এ খতনা আমাদের সমাজে মুসলমানি বলে পরিচিত। এটি একটি মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত সুন্নত।

যুগে যুগে বড় বড় নবী-রাসূল এ সুন্নত পালন করেছেন। তবে সর্বপ্রথম এ সুন্নত পালন করেছেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। হজরত সাইদ ইবনে মুসাইয়াব (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত ইব্রাহিম (আ.) হলেন খতনার সুন্নত পালনকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৬৪৬৭)

পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম (আ.)-কে তার রব কয়েকটি বাণী দিয়ে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করেন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে মানুষের জন্য নেতা বানাব। সে বলল, আমার বংশধরদের থেকেও? তিনি বলেন, জালিমরা আমার ওয়াদাপ্রাপ্ত হয় না।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১২৪)।

হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর পর সব নবী-রাসূল খতনা করিয়েছিলেন। অনেক হাদিস শরিফে এ সুন্নত পালনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতরাত, অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব পাঁচটি- খতনা করা, নাভির নিম্নদেশে ক্ষুর ব্যবহার করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ খাটো করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৮৯)।

আমাদের সমাজে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানুষের মাঝে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু কুসংস্কারও ছড়িয়ে আছে, খতনা নিয়েও এমন একটি ধারণা আছে যে, স্ত্রী গর্ভবতী অবস্থায় অন্য সন্তানের খতনা করানো যাবে না। এতে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করেন অনেকে। কেউ কেউ আবার ধর্মীয় কোনো বিধিনিষেধ আছে কিনা জানাতে চান।

আলেমরা বলেন,এটি একটি সামাজিক কুসংস্কার। মা গর্ভবতী থাকাকালীন অন্য সন্তানের খতনা করাতে কোনো বাধা নেই। এটি একটি সামাজিক কুসংস্কার।

আলেমদের মতে, এর বাইরেও সমাজের আরো কিছু কুসংস্কার রয়েছে, যেমন, চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণ চলাকালে গর্ভবতী মায়েদের কোনোরূপ কাটাকুটি, ছিদ্র বা কোনো বস্তু ভাঙা মোচড়ানো অনেক সমাজে নিষেধ করা হয়। এতে নাকি গর্ভের শিশুর দেহে এর প্রতিফলন ঘটে। এটিও একটি কুসংস্কার। ইসলামে এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।

অবৈজ্ঞানিক কোনো কথা ইসলামের নির্দেশনায় নেই। সন্তানের মুসলমানী কেন নিষেধ করা হবে?

আলেমরা বলেন, মা গর্ভবতী থাকা অবস্থায় প্রয়োজনে কি সন্তানের অপারেশন করা হবে না। গর্ভবতী নারী সার্জন কি সক্ষম থাকা পর্যন্ত নিজে অস্ত্রোপচার করবেন না। এসব তো চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণ চলাকালেও করতে হতে পারে। ইসলামে এসব কুসংস্কারের স্থান নেই। এ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

সূত্র: জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ, উচ্চতর ফতোয়া ও হাদিস গবেষণা বিভাগ মারকাযুদ্দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকা।

ধর্ম ও জীবন-এর আরও খবর