চ্যাটজিপিটি:প্রযুক্তি দুনিয়ায় ‘নতুন প্রযুক্তি’

  বিশেষ প্রতিনিধি    13-02-2023    289
চ্যাটজিপিটি:প্রযুক্তি দুনিয়ায় ‘নতুন প্রযুক্তি’

প্রযুক্তি শিল্পে নিত্য নতুন আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে ঝুঁকছে গুগল, মাইক্রোসফট, মেটার মতো টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি প্রযুক্তি জগতে চ্যাটবটের আবির্ভাব অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এরইমধ্যে ২০২২ সালের নভেম্বরে ওপেনএআই নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান চ্যাটজিপিটি চ্যাটবট চালু করেছে। এই এআই বট ইতোমধ্যে নেট দুনিয়ায় তুমুল ঝড় তুলেছে।

বর্তমানে পৃথিবীর বহুল জনপ্রিয় চ্যাটবট হিসেবে চ্যাটজিপিটিকে আখ্যায়িত করা যায়। জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এটি উন্মুক্ত করা হয়। হালে প্রতি মাসে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারী এটি ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে। রয়টার্সে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ১০০ মিলিয়ন গ্রাহক অতিক্রম করেছে চ্যাটজিপিটি। ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন ইউবিএস অ্যানালিস্টৈ লয়েড ওয়ালমসলে। অপরদিকে, সমপরিমাণ গ্রাহক পেতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটকের প্রায় ৯ মাস সময় লেগে যায়।

চ্যাটবট এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং ব্যবহার করে গ্রাহকের প্রশ্ন বুঝে স্বয়ংক্রিভাবে উত্তর দেয়। এটিকে প্রচুর ডাটা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যত বেশি সংখ্যক ডাটা দিয়ে প্রশিক্ষণ করা হবে, তত বেশি দক্ষতার সঙ্গে উত্তর দিতে সক্ষম হবে এটি।

চ্যাটজিপিটির পূর্ণরূপ হলো— চ্যাট জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইন্ড ট্রান্সফরমার। রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং ফ্রম হিউম্যান ফিডব্যাক একটি মেশিন লার্নিং কৌশল, যা দিয়ে চ্যাটজিপিটি ট্রেইন করা হয়। এই চ্যাটজিপিটি তৈরি করা হয়েছে ডিপলার্নিং ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল জিপিটি ৩.৫-এর ওপর ভিত্তি করে। ডিপলার্নিং এক ধরনের মেশিন লার্নিং টেকনিক, যেখানে তিন বা তিনের বেশি নিউরাল নেটওয়ার্ক স্তর থাকে। এটি ডাটা থেকে মানুষের আচরণ বোঝার চেষ্টা করে।

চ্যাটজিপিটি দ্রুততম সময়ে ব্যবহারকারীর নির্দেশে অদ্বিতীয় গল্প, স্ক্রিপ্ট, কবিতা, রচনা লিখতে সক্ষম। এমনকি যেকোনও প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে প্রোগ্রামও লিখতে পারবে। এটি আগের আলোচনাও মনে রাখতে পারে।

প্রকাশের পর থেকে বিনামূল্যে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও সম্প্রতি চ্যাটজিপিটি প্লাস নামের পাইলট সাবস্ক্রিপশন নিয়ে এসেছে। ব্যবহারকারীরা প্রতি মাসে ২০ ডলার সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধ করে নিত্যনতুন ফিচার উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু এটি বর্তমানে শুধু আমেরিকান গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য। অতি দ্রুত অন্যান্য দেশের ব্যবহারকারীরাও এই সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছে ওপেনএআই কর্তৃপক্ষ।

পাবলিক টেস্টিংয়ের জন্য অ্যাপটির যে ভার্সন রয়েছে, সেটি ব্যবহার করে দেখা গেছে— চ্যাটজিপিটি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিতে পারছে, ঠিক যেন মানুষের মতো। তবে কখনও কখনও ভুল উত্তর দেওয়ারও নজির রয়েছে। কারণ, যে ডাটা দিয়ে একে ট্রেইন করা হয়েছে, সেই ডাটার বাইরে প্রশ্ন করলে চ্যাটজিপিটির পক্ষে সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে না।

অপরদিকে, প্রতিযোগিতাভিত্তিক টেক মার্কেটে মেটাও (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) পিছিয়ে নেই। গেলো বছরের আগস্ট মাসে ব্লেন্ডারবট-থ্রি নামের নতুন এআই রিসার্চ প্রজেক্ট চালু করেছে। এটি সাধারণত ইন্টারনেট অনুসন্ধান করে উত্তর দিয়ে থাকে।

নেটিজেনরা চ্যাটজিপিটিকে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের চেয়েও শক্তিশালী বলে মনে করছে। এটি গুগলের মতো অনেকগুলো লিংক সরবরাহ করে না, বরং নির্দিষ্ট সঠিক উত্তর প্রদান করে।

এই চ্যাটবটকে ঘিরে নানারকম উদ্বেগ ও সমালোচনা রয়েছে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স প্রফেসর অরভিন্দ নারায়ণ এটিকে পচা জেনারেটর বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ হিসেবে উত্তরের কতটুকু সত্যতা রয়েছে, তিনি সেই যুক্তি টেনেছেন। তবে, ওপেনএআই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, মানুষ পরীক্ষামূলক চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করবে এবং সেই ডাটা ব্যবহার করে তারা একে ট্রেইন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।

লেখক: লেকচারার, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-এর আরও খবর