কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন: পর্যটনশিল্পে নতুন সমীকরণ

  বিশেষ প্রতিনিধি    29-04-2023    91
কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন: পর্যটনশিল্পে নতুন সমীকরণ

কক্সবাজারে দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের ডুলাহাজারা-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণকাজও ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে রেললাইন পুরোপুরি চালু হলে পর্যটনশিল্পে তৈরি হবে নতুন সমীকরণ। ফলে আগামী বছর নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।

কক্সবাজারে শহরের কাছেই তৈরি হচ্ছে নান্দনিক ডিজাইনের এই আইকনিক রেলস্টেশন। এই স্টেশনে থাকছে ১৭টি বাণিজ্যিক কার্যক্রম। রেলস্টেশন ও রেললাইন সম্পূর্ণ নির্মিত হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিনোদনের নতুন গন্তব্য হবে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার।

আইকনিক স্টেশনের সুবিশাল চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলা থেকে নামতে হবে ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে। আর আসার যাত্রীরা বের হবে নিচ দিয়ে। স্টেশনের ভেতরেই থাকবে কেনাকাটার ব্যবস্থা। থাকবে হলরুম। আবার চাইলেই নির্দিষ্ট লকারে ব্যাগ রেখে পর্যটকরা ঘুরে আসতে পারবেন পুরো শহর।

শুধু রেলস্টেশন নয়, এই প্রকল্পের আওতায় আরও ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে পরের স্টেশনটি রামু স্টেশন। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ইসলামাবাদ, ডুলাহাজারা, চকরিয়া, হারবাং, লোহাগড়া, সাতকানিয়া ও দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন। চট্টগ্রামের দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন, যা ছিল কক্সবাজারবাসীর জন্য স্বপ্নের মতো। এখন বাস্তবায়নের পথে।

২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

তবে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারের কাজ আপাতত হচ্ছে না। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা করা হয়। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

আইকনিক স্টেশনের স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহর ভাষ্যমতে, নির্মাণাধীন আইকনিক স্টেশনে দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না। ওপরের ছাদ খোলা থাকায় থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। এর আধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণেই কক্সবাজার রেলস্টেশনকে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন।

ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘কক্সবাজার রেলস্টেশন ডিজাইন করার সময় একটা অনুপ্রেরণা নিই। ঝিনুক ও শামুকের গঠনটা বাইরে থাকে, আর বাকি শরীরের অংশটুকু ভেতরে আবৃত থাকে। আমরা সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পুরো রেলস্টেশনটাকে একটা ছাউনি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি।’

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. মফিজুর রহমান জানান, ‘দুটি লটে আমরা কাজ করছি। লট-১-এ আমরা একটু পিছিয়ে আছি। লট-১ শুরু করেছিলাম পরে। কারণ, আমরা প্রথমে কক্সবাজারে জমি পেয়েছিলাম। এ পাশ আশা করছি জুনের মধ্যে শেষ করতে পারবো। বাকিটা সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে। তাহলে অক্টোবর-নভেম্বরে ট্রেন চালাতে পারবো বলে আশা করছি।

প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে চকরিয়া ৫০ কিলোমিটার ও পরের ধাপে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার ৫০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৯০ ভাগের বেশি হয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারে নির্মাণাধীন ঝিনুক আকৃতির আদলে তৈরি আইকনিক রেলস্টেশনটি শুধু যাত্রী যাওয়া-আসার জন্য নয়। এখানে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে টেকসই করার জন্য নানা ধরনের ব্যবহারকে সংমিশ্রণ করা হয়। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা, রেস্টুরেন্ট, ফুডকোর্ট, মাল্টিপারপাস হল, হোটেল থাকবে। সুতরাং এটি শুধু রেলস্টেশন নয়, এটি একটা ডেস্টিনেশন। এটা একটা আকর্ষণীয় আর্থসামাজিক মডেল। চারদিকে গ্লাস লাগানো হচ্ছে। এখানে কোনও কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন নেই।

এ ছাড়া ছাউনিটা পুরো কাঠামোটাকে ঢেকে রেখেছে। ফলে সব সময় ভবনটি সহনীয় তাপমাত্রায় থাকবে। এতে কুলিং লোড কম হবে। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের লোডও কম হবে। এতে এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এই প্রকল্পটি পরিবেশগতভাবে টেকসই হিসেবে ডিজাইন করা। এখানে বৃষ্টির পানি থেকে শুরু করে পানি পুনর্ব্যবহার করা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। পানির জন্য কম অপচয় ওয়াটার ফিক্সচার ব্যবহার করা হচ্ছে।

সারাদেশ-এর আরও খবর