কক্সবাজারে দৃশ্যমান দেশের প্রথম আইকনিক রেল স্টেশন

  বিশেষ প্রতিনিধি    04-05-2023    96
কক্সবাজারে দৃশ্যমান দেশের প্রথম আইকনিক রেল স্টেশন

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। প্রধান আকর্ষণ দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন। এ যেন বিশাল আকৃতির একটি ঝিনুক! ঝিনুকের পেটে মুক্তার দানা! তার চারপাশে পড়ছে স্বচ্ছ জলরাশি! এর মধ্যেই আসছে ট্রেন! ঝকঝকে আধুনিক এ স্টেশন অনেকটাই উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের মতো। দেশের প্রথম এই আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।

এদিকে কক্সবাজার অংশের ৫০ কিলোমিটার রেল লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম অংশের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ২৫ কিলোমিটারের কাজ আগস্টের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে। সব মিলিয়ে রেললাইন পুরোপুরি চালু হলে পর্যটনশিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। ফলে অক্টোবরে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কঙবাজার।

এই ব্যাপারে দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইনের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আমরা আশা করছি সব কিছু ঠিক–ঠাক থাকলে আগস্টের মধ্যে অবশিষ্ট ২৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ করতে পারবো। এই ২৫ কিলোমিটারের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু স্লিপার আর রেল বিট বসবে। আগস্ট–সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে ফিনিশিং ওয়ার্কসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করে অক্টোবরে আমরা ট্রায়ালরান উদ্বোধন করতে পারবো বলে আশা করছি। প্রথমত আমরা এক জোড়া ট্রেন দিয়ে হলেও চালু করে দেবো।

দোহাজারী–কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আবদুল জাবের মিলন বলেন, সমুদ্রসৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের প্রায় ২৯ একর জায়গাজুড়ে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি এখন দৃশ্যমান। ঝিনুকের আদলে নির্মিত হয়েছে এই স্টেশন। আইকনিক এই স্টেশনটি নির্মাণের সময় চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ–সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

পুরো প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং শ্রমিকসহ মিলে মোট ছয় শতাধিক লোকের চার বছরের শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি আজ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এখন চারদিকে চলছে গ্লাস ফিটিংস, ছাদের স্টিল ক্যানোফি, আর নানা ধরনের ফিটিংস বসানোর কাজ। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৩ ভাগের বেশি। এশিয়ার প্রথম শতভাগ পর্যটনবান্ধব কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয় তল বিশিষ্ট স্টেশনটির সম্পূর্ণ ফ্লোর এরিয়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট।

রয়েছে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা। পর্যটকরা যেন কঙবাজারে দিনে এসে ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। শুধু এই আইকনিক রেলস্টেশন নয়, এই প্রকল্পের আওতায় আরও ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। কঙবাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে পরের স্টেশনটি রামু স্টেশন। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ইসলামাবাদ, ডুলাহাজারা, চকরিয়া, হারবাং, লোহাগড়া, সাতকানিয়া ও দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন। চট্টগ্রামের দোহাজারী–কঙবাজার রেললাইন, যা ছিল চট্টগ্রামবাসীর জন্য স্বপ্নের মতো। এখন বাস্তবায়নের পথে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের অর্ধেকই আসেন একদিনের জন্য। এ সময় তারা নিজেদের মালপত্র রাখার নিরাপদ জায়গা পান না। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে স্টেশনে রাখা হচ্ছে লাগেজ ও লকার সিস্টেম। এছাড়া থাকছে আধুনিক ট্রাফিক সুবিধা, বিশ্বমানের এ স্টেশনের নিচতলায় থাকছে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয়তলায় শপিংমল ও রেস্তোরাঁ।

তিনতলায় থাকবে তারকামানের হোটেল, যেখানে ৩৯টি রুমে থাকার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। থাকছে মসজিদ, শিশু যত্ন কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি। থাকছে সাধারণ ও ভিআইপিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ড্রপ এরিয়া, বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং থ্রি হুইলারের জন্য আলাদা পার্কিং এরিয়া, থাকছে এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ ছাড়াও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা কেন্দ্র।

উল্লেখ্য ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এই মেগা প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই মেগাপ্রকল্পের দোহাজারী– কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

এরমধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অপরদিকে চকরিয়া থেকে কঙবাজার পর্যন্ত চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে রেললাইন নির্মাণ কাজটি করছে। ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড যে অংশে কাজ করেছে তাদের সেই অংশের কাজ খুব দ্রুত শেষ হয়েছে।

এখন তমা কনস্ট্রাকশনের অংশের কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চকরিয়া থেকে কঙবাজার অংশে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী–চকরিয়া অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে সাঙ্গু নদীর ওপর একটি, মাতামুহুরী নদীর ওপর দুটি এবং বাঁকখালী নদীর ওপর একটি বড় রেলসেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সুত্র: আজাদী

সারাদেশ-এর আরও খবর