মিতু হত্যা, ম্যাডাম পড়ে আছেন আর মাহির চোখ মুছে মুছে কান্না করছে

  বিশেষ প্রতিনিধি    27-06-2023    67
মিতু হত্যা, ম্যাডাম পড়ে আছেন আর মাহির চোখ মুছে মুছে কান্না করছে

মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার পলাতক আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুছা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বাসায় প্রায়ই আসতো বলে আদালতে জানিয়েছেন মামলার সাক্ষী ও বাবুল আক্তারের বাসার দারোয়ান আবদুস সাত্তার মোল্লা।

আজ সোমবার (২৬ জুন) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি। সাক্ষ্যে আবদুস সাত্তার বলেন, “বাবুল আক্তারের ছেলে মাহিরকে সবসময় স্কুলের বাসে দিয়ে আসতে যেত কন্সটেবল সাদ্দাম। নিয়েও আসতেন তিনি। কিন্তু ঘটনার দিন সাদ্দাম আসেননি। তাই বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু ম্যাডাম মাহিরকে নিয়ে সকাল সাড়ে ছয়টায় বাসে তুলে দিতে যান। আমি তখন দায়িত্বে থাকা অন্য সিকিউরিটি গার্ড তারেককে দায়িত্ব দিয়ে চা আনতে ফ্লাস্ক নিয়ে বের হই।”

তিনি বলেন, “বিল্ডিং থেকে বের হয়ে শেষ মাথার ডানদিকে গিয়ে দেখি ম্যাডাম রাস্তার উপর পড়ে আছেন আর মাহির চোখ মুছে মুছে কান্না করছে। আমি তখন দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বিল্ডিংয়ের নিচে চলে আসি। এরপর বিল্ডিংয়ের সব বাসায় কল দিয়ে ঘটনা জানাই। বাবুল স্যারের বাসায় কল দিয়ে তাদের বাসার কাজের মেয়ে ফাতেমাকে বলি একটি চাদর নিয়ে আসার জন্য। এরপর আমি চাদর দিয়ে ম্যাডামের লাশকে ডেকে দেই। পরে পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়।”

সাক্ষ্যে তিনি আরও বলেন, “আমি চাকরি করাকালীন মুছা নামের একজন বাবুল স্যারের বাসায় প্রায়ই আসত।” তখন আদালত তিনি মুছাকে চেনেন কি না জিজ্ঞেস করেন। জবাবে আবদুস সাত্তার বলেন, “প্রথমদিকে চিনতাম না। সে বাজার নিয়ে আসত। আমি ম্যাডাম থেকে পারমিশন নিয়ে তাকে যেতে দিতাম। কখনও কখনও বাজার নিচে রেখে যেত। ফাতেমা এসে নিয়ে যেত। বাবুল স্যারের বাসার জন্য আলাদা রেজিস্ট্রি খাতা ছিল। কেউ আসলে নাম লিখে নিতাম। ঘটনার তিন-চারদিন আগে আমি ওয়াশরুমে গিয়েছি। কারা যেন খাতাটি তখন নিয়ে যায়।”

সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতের হাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে শনাক্ত করেন আবদুস সাত্তার। এরপর তাকে জেরা করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন। জেরায় আবদুস সাত্তার বলেন, “বাবুল আক্তার যে বিল্ডিংয়ে থাকতেন সেটাতে আমি ২ বছর ধরে চাকরি করি। তবে কোন সাল থেকে কোন সাল সেটা মনে নেই। বাবুল স্যার কোন বছর থেকে থাকেন বা কত বছর ছিলেন সেটাও আমি জানি না। এগুলো আমার জানার বিষয় না। স্যারের বাসায় যাওয়ার জন্য যে রেজিস্ট্রি খাতা ছিল সেটা কখন, কোন তারিখ বা কে নিয়ে গেছে সেটা জানি না। তবে আরেকজন যে ডিউটিতে ছিলেন তারেক তার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। তবে নিয়ে যেতে আমি দেখিনি। তারেকের কাছ থেকে শুনেছি।”

তিনি বলেন, “খাতাটি শুধু বাবুল আক্তার স্যারের পারসোনাল ছিল। ফ্ল্যাট মালিক সমিতির চেয়ারম্যান বিষয়টি জানতেন। বাবুল স্যার ওই বিল্ডিং-এর ভাড়াটিয়া ছিলেন। তার ফ্ল্যাট নম্বর ছিল ডি-৭। বিল্ডিং ও এর আশেপাশে এবং রাস্তাঘাট সিসি ক্যামেরার আওতাধীন ছিল। যারাই ওখানে আসতো তাদের সিসি ক্যামেরায় ছবি উঠত। আমি ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কাছে একই জবানবন্দি দিয়েছি। মুছা ঘটনার পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে সকাল ১০-১১ টার দিকে বাজার নিয়ে এসেছিল। মুসা ওদের কাজের লোক ছিল কি না সেটা আমি জানি না। বাজার করতেও কে বলতো সেটাও জানি না।”

সাত্তারের সাথে ওই বিল্ডিংয়ে তারেক নয় বরং জসিম নামের সিকিউরিটি গার্ড ছিল বাবুল আক্তারের আইনজীবীর এমন দাবিতে তিনি বলেন, “ইক্যুইটি সেঞ্চুরিয়ান নামক ওই বিল্ডিংয়ে আমরা চারজন সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বে ছিলাম। বাকি তিনজনের নাম মনে নেই। জসিম নামের কেউ দায়িত্ব ছিল কি না জানি না।”

এ সময় বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন দাবি করেন, তারেক নামে কোনো সিকিউরিটি গার্ড ওই বিল্ডিংয়ে ছিল না। তার কাছ থেকে খাতা নিয়ে যাওয়া, মুসা নামের কেউ বাবুলের বাসায় বাজার করে দেওয়া সব মিথ্যা ও বানোয়াট।

সারাদেশ-এর আরও খবর