ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ আজ

‘সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের’

  বিশেষ প্রতিনিধি    07-03-2023    283
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ আজ

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

‘‘... শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে, অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা; কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের।’’

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের প্রত্যক্ষদর্শী কবি নির্মলেন্দু গুণ তার কবিতার শেষাংশে এভাবেই বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী বক্তৃতা ও দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর আগমনকে রবীন্দ্রনাথের দৃপ্ত পায়ে হাঁটার সঙ্গে তুলনা করে এই ভাষণকে কবিতা বলে আখ্যা দিয়েছেন নির্মলেন্দু গুণ। কবির ভাষ্যমতে, স্বাধীনতা শব্দটি বুকে ধারণ করে মুখে তুলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির স্বাধীনতা-মুক্তি ও জাতীয়তাবোধ জাগরণের মহাকাব্য, বাঙালি তথা বিশ্বের সকল লাঞ্ছিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সনদ মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার চূড়ান্ত প্রেরণা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিল এবং বিশ্বে সর্বাধিকবার প্রচারিত ও শ্রবণকৃত অলিখিত ভাষণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি শুধু ঐতিহাসিক ভাষণই ছিল না, বরং এটি ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি শপথ। ওই দিন বাঙালিরা শপথ নেয় এবং ২৬ মার্চ ভোরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’

আজ সেই ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। ওই দিন বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্র ভেদ করে মঞ্চে উঠে বঙ্গবন্ধু তাঁর বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

এদিকে ৭ মার্চ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল আমাদের নয়, বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা নামের এক অমরবাণী শোনান এবং সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখান। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির জীবনে ৭ মার্চ এক অবিস্মরণীয় দিন।

১৯ মিনিটের এই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম জনযুদ্ধে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক এ ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক সাগর রক্ত আর ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। বিশ^ মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র।

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে এবং বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার অনির্বাণ শিখা হয়ে অফুরন্ত শক্তি ও সাহস যুগিয়ে আসছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালির মন-মননে চিন্তা-চেতনায় আদর্শ-অনুপ্রেরণায় স্বপনে-জাগরণে প্রদীপ্ত শিখারূপে প্রবাহিত।

৭ মার্চ উপলক্ষে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৮টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন নেতারা। বিকাল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে হবে আলোচনাসভা।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে গৃহীত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয়-এর আরও খবর