প্রত্যেক মানুষ আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবন-জীবিকা পাবে: প্রধানমন্ত্রী

  বিশেষ প্রতিনিধি    22-03-2023    148
প্রত্যেক মানুষ আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবন-জীবিকা পাবে: প্রধানমন্ত্রী

সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষ সমাজের বোঝা না হয়ে যাতে সুন্দর জীবন-জীবিকা পায় এবং সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকে, সেজন‌্য আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে গৃহহীন ও ভৃমিহীনদের ঘর উপহার দেওয়ার প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তর উপলক্ষে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব‌্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুব আনন্দিত যে মানুষকে মাথা গোজার ঠাঁই করে দিতে পারছি। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানেই থাকুক নিশ্চয়ই তার আত্মা শান্তি পাবে। দুঃখী মানুষের মুখে যে হাসি ঘর পাওয়ার পর, সেই হাসিটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।

কোনো এলাকায় ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকলে তা জানানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো এলাকায় যদি কেউ ভূমিহীন পরিবার থাকে সেই তালিকা করবেন। আমরা ঘর করে দেবো।

‘আমরা চাই, প্রত‌্যেকটা মানুষ আশ্রয় পাবে, জীবন-জীবিকা পাবে। সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। নিজের পায়ে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে। সেই লক্ষ‌্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে তিনি চেয়েছিলেন। ইনশাল্লাহ তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো সেটাই আমাদের লক্ষ‌্য।

সমাজের ভাসমান শ্রেণিকে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এনেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশে বেদে শ্রেণি আছে। ভাসমান জীবনযাপন করে। শুধু মাছ ধরে তাদের জীবন চলে। তাছাড়া হিজড়া সম্প্রদায় যাদের আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি সাংবিধানিকভাবে। এছাড়া আরও যারা ভাসমান শ্রেণি আছে তাদের আমরা পুনর্বাসন করছি। চা শ্রমিকদের জন‌্য পদক্ষেপ নিয়েছি। পদ্মা সেতুসহ প্রতিটি প্রকল্পের সাথে সাথে মানুষগুলো যাতে উদ্বাস্ত ভূমিহীন না হয়ে যায় সেজন‌্য আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একটাই লক্ষ‌্য বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একজন মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না।

‘শুধু ঘর নয়, সুপেয় পানি, বিদ‌্যুৎ, তাদের লোন দেওয়া হচ্ছে। যে যেভাবে জীবনধারন করতে চায়, সবাই সেভাবে নিজের জীবন উন্নত করছে। তাদের কাজগুলো কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে।’

গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়ার কাজ শুরু করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে নতুন উদ‌্যামে আমরা কাজ শুরু করি।

এ সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত এবং তা বাস্তবায়নের সঙ্গে ছিলেন, পরিশ্রম করেছেন; তাদের প্রতি ধন‌্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর উপহার দেওয়ার পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতা শুধু ঘর এবং স্বাধীনতাই দেননি এদেশের মানুষের জীবন জীবিকার জন‌্য তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, তা যদি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ১০ বছরের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠতো।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা এদেশের মানুষের ভাগ‌্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, শোষণ করেছে, আর নিজেদের ভাগ‌্য গড়েছে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের সংগঠন। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে এদেশের মানুষের ভাগ‌্য পরিবর্তনে কাজ করেছে। সেটা আজকে প্রমাণিত সত‌্য।

‘আমরা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একটি মানুষ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না সেই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। ২১ বছর পর সরকার গঠন করে ৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ‌্যোগ নিই।”

দেশের দুর্যোগ দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগই জনগণের পাশে থাকে জানিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ’৯১ সালে একটি ঘূর্ণিঝড় হয় দেশে। তখন বিএনপি ক্ষমতায়। সেই ঘূর্ণিঝড়ে সরকার কোনো আগাম ব‌্যবস্থা নেয়নি। ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম এবং দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল তছনছ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগই প্রথম ছুটে গিয়েছিলো দুর্গত মানুষের কাছে। ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়াই কিন্তু তখনকার সরকার...আমরা যখন সংসদে বিয়ষটি তুললাম..খালেদা জিয়া ঘুমাচ্ছিলেন এবং তিন বাহিনীর প্রধান গলফ খেলছিলেন। সারা দেশ তখন তছনছ। সে সময়ে রাস্তাঘাট বন্ধ ছিলো কিন্তু আমরা মানুষের পাশে ছুটে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে অনেক মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে থাকতো। কক্সবাজারের সেসব মানুষকে আমরা বহুতল ভবন করে পুনর্বাসন করেছি।

পরে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলার বানারিপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয়-এর আরও খবর