উন্নয়নের নামে রক্তশূন্য দেশে গহনা পরানো হচ্ছে: জিএম কাদের

  বিশেষ প্রতিনিধি    22-03-2023    181
উন্নয়নের নামে রক্তশূন্য দেশে গহনা পরানো হচ্ছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, বর্তমানে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে; কিন্তু প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সব মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন। এটি শুধু পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশ পরিচালনার সময়ে হয়েছিল।

তিনি বলেন, এখন গণমুখী উন্নয়ন হচ্ছে না। উন্নয়নের নামে মুষ্টিমেয় মানুষ আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষ এই উন্নয়নের স্বাদ পাচ্ছে না। দেশকে যদি দেহ ধরা হয় তাহলে বর্তমানে উন্নয়নের নামে রক্তশূন্য দেশে গহনা পরানো হচ্ছে। অথচ দেশের জীবনীশক্তি শুষে খাওয়া হচ্ছে। সঠিকভাবে তদন্ত করলে প্রচুর অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয়ের প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।

রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) মিলনায়তনে বুধবার সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। আরও বক্তব্য দেন- সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি।

আলোচনায় আরও অংশ নেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুব সংহতির আহবায়ক এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, জাতীয় মহিলা পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক হেনা খান পন্নী, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, কৃষক পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সাংস্কৃতিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ, মৎস্যজীবী পার্টির সদস্য সচিব মীর সামসুল আলম লিপ্টন, জাতীয় যুব মহিলা পার্টির আহ্বায়ক নাজনীন সুলতানা।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ আহমেদ এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, সাহিদুর রহমান টেপা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এসএম ফয়সাল চিশতী, সুনীল শুভরায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, নাজমা আকতার এমপি, মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, শেরীফা কাদের এমপি, নূরুল আজহার শামীম, হারুন অর রশিদ, জামাল হোসেন, মাসরুর মওলা, লাকি বেগম, জহিরুল হক জহির, সাব্বির আহমেদ, মনির আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, শেখ আলমগীর হোসেন, আমীর উদ্দিন আহমেদ ডালু, তারেক এ আদেল, সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, যুগ্ম মহাসচিব মো. নোমান মিয়া, ফখরুল আহসান শাহজাদা, সামসুল হক, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্মল চন্দ্র দাস, হুমায়ুন, নাসির উদ্দিন সরকার, মো. হেলাল উদ্দিন, এনাম জয়নাল আবেদীন, মাখন সরকার, সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, গোলাম মোস্তফা, মিজানুর রহমান মিরু প্রমুখ।

জিএম কাদের আরও বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বর্তমান উন্নয়নের স্বাদ পাচ্ছে না। প্রতিদিন দেশের মানুষ দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র হচ্ছে। দেশের মানুষ উন্নয়নের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের ১০০ টাকা আয় হলে ধনী শ্রেণির আয় হয় ২৮ টাকা। আর শতকরা ৫ ভাগ নিম্ন শ্রেণির আয় হয় মাত্র ২৩ পয়সা। উন্নয়নের নামে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এটাকে আমরা উন্নয়ন বলতে পারি না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল পল্লীবন্ধুর। উন্নততর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল তার। কল্যাণমুখী উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন তিনি। কাঠামোগত ও সংস্কারগত উন্নয়ন করেছেন। সারাদেশে কাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন, যা এখনো মানুষের চোখে পড়ে। যমুনা বহুমুখী সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম মেগা প্রকল্প। যেটি বঙ্গবন্ধু সেতু নামে পরিচিত। উত্তরবঙ্গের মানুষের অনেক বড় উন্নয়ন হয়েছে এই সেতুর কারণে। পল্লীবন্ধু যমুনা সেতু তৈরি করতে পারেননি কিন্তু সব কিছু প্রস্তুত করতে পেরেছেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে শুরু করে সবাই যমুনা সেতুকে অসম্ভব বলেছিলেন। পদত্যাগের কারণে পল্লীবন্ধু যমুনা সেতু তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো এই পরিকল্পনা ও স্টিমেটে যমুনা সেতু তৈরি করেছে। যেদিন উদ্বোধনের কথা, সেদিনই উদ্বোধন হয়েছে। এটি ছাড়া দেশে আর কোনো মেগা প্রকল্প ষ্টিমেট অনুযায়ী হয়নি।

জিএম কাদের বলেন, সবাই বলেন পল্লীবন্ধু একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, আসলে তিনি ছিলেন প্রকৃত নায়ক। আজীবন যুবক ছিলেন, মৃত্যুর আগে অসুস্থতার আগ পর্যন্ত যুবক ছিলেন। কোনো ক্ষেত্রেই পরাজিত হননি তিনি। তিনি বাংলাদেশের জন্য গর্বের। ৩২ বছর ক্ষমতা রাইরে থেকেও জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে টিকে আছে। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন পল্লীবন্ধু। তাই প্রতিপক্ষরা তাকে নানান অপবাদ দিয়েও সফল হয়নি। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হয়নি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন পল্লীবন্ধু। মৃত্যুর পর চারটি জানাজায় মানুষের লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। পল্লীবন্ধু গণমুখী উন্নয়ন ও সংস্কারের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা তা বাস্তবায়ন করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমরা দ্রুতই দ্বিতীয় পল্লীবন্ধু পদক বিতরণ করব।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, বিচারপতি শাহাবুদ্দিন প্রতিশ্রুত ভঙ্গ করে পল্লীবন্ধুকে মন্ত্রী, এমপিসহ কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। কোনো অধিকার পায়নি জাতীয় পার্টি। এমন বাস্তবতায়ও দেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ছিল জাতীয় পার্টি। জেলে অন্তরীণ অবস্থায় ৫টি করে আসনে যে নেতা বিজয়ী হন তাকে স্বৈরাচার বলা হয় কোন মুখে? পল্লীবন্ধুর সর্বশেষ বাজেট ছিল মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকার। বর্তমান সরকারের বাজেটের মাত্র দেড় শতাংশ। স্বল্প বাজেটে বেশি কাজ করার যে দৃষ্টান্ত পল্লীবন্ধু দেখিয়েছেন তা বিস্ময় হয়ে আছে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, যারা সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতিতে এসেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছাড়া আমি সবাইকে ঘৃণা করি। এরশাদ সাহেবকে শ্রদ্ধা করি ভালোবাসি শুধু এই কারণে- তিনি জেলে থেকেও ৫টি করে আসনে এমপি হয়েছেন দুইবার। আবার তার ছেড়ে দেওয়া আসনে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তারাও বিজয়ী হয়েছেন। পল্লীবন্ধু অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। অত্যন্ত সুন্দর মানুষ ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদ ছিলেন এক দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক। রাজনৈতিক দর্শন ছিল তার। ৪৬০টি উপজেলা ও ৬৪টি জেলা সৃষ্টি করে প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করেছিলেন পল্লীবন্ধু। জীবন ও মৃত্যুর মাঝে এরশাদ সাহেব অসংখ্য র্কীতি গড়েছেন। সাভারে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ থেকে বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পল্লীবন্ধুর হাত ধরেই হয়েছে।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঝে চরিত্রগত কোনো তফাত নেই। ক্ষমতায় গেলে তারা দুর্নীতি, দুঃশাসন, টেন্ডারবাজি ও দলবাজি করে। ৩৩ বছরে দল দুটি এখনো একমত হতে পারেনি- কেমন করে একটি জাতীয় নির্বাচন হবে। হাসপাতালের বাথরুম থেকে বারান্দায় রোগী আছে কিন্তু চিকিৎসক ও ওষুধ নেই।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। পল্লীবন্ধু সব সময় গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতেই রাজনীতি করেছেন। কিন্তু এতদিনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে লুটপাটের রাজনীতি কায়েম করেছে। কম বাজেটে গণমানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে পল্লীবন্ধু যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সেই রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, সেনাসদস্য থেকে রাজনীতির মাঠে যে সাফল্য দেখিয়েছেন পল্লীবন্ধু তা ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে দেশকে অন্ধকার থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন।

জাতীয়-এর আরও খবর