নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে সতর্ক থাকুন

আওয়ামী লীগ জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসতে আমাদের ভোট চুরি করা লাগে না

  বিশেষ প্রতিনিধি    14-04-2023    111
নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে সতর্ক থাকুন

আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও হবে। কারণ একটা দেশ এত দ্রুত এত উন্নতি করুক, অনেকে তো এটা চায় না। কাজেই তারা তাদের দিক থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেই যাচ্ছে। সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল বুধবার গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এই পরামর্শ দেন।

বিএনপি মাইক লাগিয়ে মিথ্যা বলে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি এসব দল, এরা তো আর মাটি-মানুষ থেকে উঠে আসে নাই। এক মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে তার পকেট থেকে একটা দল বের করে দিয়েছে, সেটা নিয়ে তারা চেঁচামেচি করে যাচ্ছে। প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছে। রোজা রমজানের দিন এত মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে কেন? আমি তাও বুঝতে পারছি না। একটু তো রয়ে সয়ে বলা উচিত। কোনো উন্নতিই নাকি তারা দেখে না চোখে। দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। আর আমি যেটুকু করি বাংলাদেশের মানুষের জন্যই করি। আপনজন সব হারানোর পর এদেশের মানুষই কিন্তু আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই এজন্য যে, তারা পাশে ছিল বলেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি। আপনারা আছেন বলেই কাজ করতে পারছি।

আওয়ামী লীগ কখনো অন্যভাবে ক্ষমতায় আসেনি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি, মানুষ আমাদের ভোট দেয়। সেটা হচ্ছে বাস্তব কথা। কাজেই এখানে ক্ষমতায় আসতে আমাদের ভোট চুরি করা লাগে না, ভোটে কোনো কিছু করাও লাগে না। জনগণের সেবা করে জনগণের আস্থা অর্জন করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ কিন্তু অন্যভাবে কখনো ক্ষমতায় আসে নাই। সব সময় ভোটের মাধ্যমে এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা (বিএনপি) এখন মাইক লাগিয়ে সারাদিন বসে কথা বলে সত্য মিথ্যা দিয়ে। তাদের তো ক্ষমতায় আসাই হচ্ছে বন্দুকের নলে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। এজন্য জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। তিনি আরো বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচন বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। সে নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে নাই। তাদের অবস্থান তো সেখানেই নির্দিষ্ট। তারপরও আমরা দেশে উন্নয়নের কাজ করেই দেশকে এত উন্নতি করতে পেরেছি। আজকে আমরা এটাই শুকরিয়া আদায় করি।

সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে দলটির সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ সংগঠনটা আরও শক্তিশালী হবে, সেটা আমরা চাই। আর আগামী নির্বাচনও আমাদের সামনে, সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কাজেই আমরা জাতির পিতার সেই আদর্শ মেনেই দেশ এবং দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

দেশের দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষ কমেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একনেকে আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী সারা বাংলাদেশে সার্ভে রিপোর্ট পেশ করলেন। সেখানে বললেন, আমাদের দারিদ্র্যসীমা ২০০৬ সালে ৪১ ভাগ ছিল, আজকে সেটা ১৮ ভাগে নেমে এসেছে। তো আমি বললাম আরও ২/৩ ভাগ যাতে তাড়াতাড়ি কমাতে পারি, সেটা আমরা চেষ্টা করবো। আর অতি দরিদ্রের হার যেটা প্রায় ২৫ ভাগ ছিল সেটা ৫ ভাগে নেমে এসেছে। এটা মাথায় রেখে আমাদের আরও সামনে কাজ করতে হবে দেশের মানুষের জন্য। যে একটা মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না।

গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থানের মতো প্রতিটি খাতে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পেলেও বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না বলে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতা ও তাদের সমমনাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতে বাবা-মা, ভাইসহ সর্বস্ব হারানোর পর দেশবাসীকে নিজের কাছের মানুষ ভেবে তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা (দলের লোকজন) আমার পাশে থাকলে আমি জনগণের জন্য কাজ করতে পারবো।

ভূমিহীন মানুষকে খুঁজে পেতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের অঞ্চলে আপনারাও খোঁজ করবেন কোন পরিবার নিস্ব আছে কি না, ভূমিহীন আছে কিনা। কেউ ভূমিহীন থাকবে না এই দেশে।

জাতীয়-এর আরও খবর