আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস

জাতির এই ক্রান্তিকালে ভাসানীর মতো নেতার বড্ড প্রয়োজন

  বিশেষ প্রতিনিধি    15-05-2023    100
আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস

কীর্তিনাশা পদ্মার ঢেউয়ের নাচন থেমে গেছে। বিশাল বিশাল বালুচরে পদ্মার বুক ভরা। প্রতি বছর বাড়ছে চরের বিস্তৃতি। পদ্মা তীরবর্তী অঞ্চলজুড়ে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ১৯৭৬ সালের ১৬মে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ফারাক্কার ভয়াবহতা সর্ম্পকে সচেতন করে তোলা ও প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসী পানি নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের লাখো জনতাকে সাথে নিয়ে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান হতে ফারাক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।

সেই থেকে দিনটি ফারাক্কা লংমার্চ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭৬ সালের ঐতিহাসিক লংমার্চের পটভূমিতে ছিল বাংলাদেশের প্রকৃতি কৃষি, পরিবেশ, মৎস্য তথা সার্বিক জীবন-জীবীকার উপর আঘাত হানা, মরণ বাঁধ ফারাক্কা। বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তের অদূরে চাপাইনবাবগঞ্জের ওপাড়ে ফারাক্কা নামক স্থানে ভারত গঙ্গা নদীর উপর এই বাঁধ নির্মাণ করে। ১৯৭৩ সালে পরিক্ষামূলকভাবে চালুর নামে শুরু হয় পানির আগ্রাসন। ফলে বাংলাদেশ অংশে পদ্মার বিশাল এলাকা জুড়ে শুরু হয় বিপর্যয়। ধীরে ধীরে পদ্মার মরণ দশা শুরু হয়।

অসংখ্য শাখা নদ নদী তার অস্তিত্ব হারিয়েছে অনেক আগেই। পদ্মা অববাহিকা এলাকায় মরুময়তা গ্রাস করছে। ফারাক্কার ভয়াবহতার কথা ভেবে ১৯৭৬ সালে ৯৬ বছরের সংগ্রামী মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী গর্জে উঠেন। মরণবাঁধ ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও সেøাগান গোটা জাতিকে আলোড়িত করে। ফারাক্কা লংমার্চের ডাক দেন। তার আহ্বানে সারা দিয়ে ১৯৭৬ সালের ১৫ মে যেভাবে যে ভাবে যে পেড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে দেশপ্রেমিক জনতা ছুটে আসে রাজশাহীতে। লাখো মানুষের পদভার আর গগনবিদারী সেøাগানে চারিদিক কেঁপে উঠে।

১৫ মে মাদরাসা ময়দানে দশ মিনিটের জ্বালাময়ী ভাষায় স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বক্তব্য দেন যা ছিল একই সঙ্গে উদ্দীপনা ও দিক নির্দেশনা। ভাষণ শেষে লাখো জনতার কাফেলাকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যান ফারাক্কা অভিমুখে। প্রচ- দাবদাহ আর ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে লংমার্চ অতিক্রম করেন ৮৬ কিলোমিটার পথ। ক্ষুধা ও পিঁপাসায় কাতর মানুষ হাসিমুখে দেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অংশ নিয়ে ছিল লংমার্চে।

গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে ক্ষুধা পিপাসায় কাতর মানুষেরা সকল প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত মিছিলে শরীক থাকে। দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তর থেকে বয়োবৃদ্ধ জননেতার ডাকে ছুটে আসা দিন মজুর, মেহনতি মানুষ কৃষক শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ দিন-রাতের মুসাফিরের কষ্ট স্বীকার করে এই দীর্ঘ পথ যাত্রাকে হাসি মুখে মেনে নেন। পথের যাত্রা বিরতিকালে খাবার ছিলো সামান্য ডাল চালের খিঁচুরি আর পথের নাস্তা ছিলো শুকনো চিড়া। অন্যদিকে দেশপ্রেমিক স্থানীয় জনতা আবেগে আপ্লুত হয়ে এই কাফেলার প্রতি বাড়িয়ে দেয় সহোযোগিতার হাত। সে¦চ্ছায় পানি ও হালকা খাবার সরবরাহ করে কাফেলার শরীকদের ক্ষুধা পিপাসার নিবারনে সহযোগি হয়। সে ছিলো এক আবেগময় নজিরবিহীন দৃশ্য।

কাফেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলেজ মাঠে মিছিল রাত যাপন করে পরদিন সোমবার সীমান্তবর্তী কানসাট অভিমুখে গমন করে। পথে মহানন্দা নদী অতিক্রম করে নৌকার সেতুর সাহায্যে । সকাল ৮ টায় যাত্রা শুরু করে বিকেলে কানসাট হাইস্কুল মাঠে বিশাল সমাবেশে মাওলানা ভাসানী বলেন, ভারত সরকারের জানা উচিত বাংলাদেশের মানুষ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। কারো হুমকির তারা পরোয়া করে না। মাওলানা এখানেই লংমার্চের সমাপ্তি ঘোষণা করেন ।

যারা ফারাক্কা লংমার্চে অংশ নিয়েছিলেন সেসব প্রবীণ ব্যক্তি সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৪৭ বছর আগে মাওলানা ভাসানী আশঙ্কার যে কথা বলেছিলেন ,গর্জে উঠেছিলেন আজ তা সত্যে পরিণত হয়েছে। পদ্মার মরণদশা পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখে বলছেন আজ ভাসানীর মতো নেতার বড্ড প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের লং মার্চের ছয় মাস পর ১৭ নভেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। আজ মাওলানা ভাসানী নেই কিন্তু তার সেই আন্দোলনের ঢেউ যেন আজো আন্দোলিত করে দেশের আকাশ বাতাস। মরা পদ্মার নিষ্প্রাণ তরঙ্গে যেনো তারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়।

জাতীয়-এর আরও খবর