প্রতিপাদ্য: সবার জন্য স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচার: ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত

  বিশেষ প্রতিনিধি    10-12-2023    148
প্রতিপাদ্য: সবার জন্য স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচার: ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত

জন্মস্থান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে মানবাধিকার সর্বজনীন ও সবার জন্য সমান।

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে। এ ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকৃত হয় মানবাধিকার সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই মানবাধিকার লাভের অধিকারী। জাতিসংঘের ওই ঘোষণাপত্রের ৩০টি অনুচ্ছেদে প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘোষণাপত্র গ্রহণের দিনটি প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এবছর এ দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘সবার জন্য স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচার’।

দিবসটি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা প্রতি বছরের ন্যায় সারাদেশে প্রেসক্লাবের সামনে রালি মানববন্ধন, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেন।

জাতীয় প্রেসাক্লাবের সামনে আজ উপস্থিত সবার উদ্দেশ্য বক্তব্য প্রদান করেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম, মহাসচিব,ডাঃ হাছান আহমেদ মেহেদী. যুগ্ম মহাসচিব, অধ্যক্ষ মোঃ একরাম উল্ল্যাহ।

আলোচনা সভা পরিচালনা করেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ভুইয়া মোঃ আলী, আরো উপস্থিত ছিলেন পরিচালক, মোহাম্মদ কলিম, হাফিজর রহমান, মোঃ আতিকুর রহমান,গুলশান আরা। ঢাকা বিভাগ,জেলা, মহানগর উত্তর- দক্ষিণ, কামরাঙ্গির চর সহ বিভিন্ন কমিটির সদস্যগণ ।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হতে সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার ও চাহিদা নিশ্চিতের পাশাপাশি, সকলের নিরাপত্তা বিধান, স্বাধীনতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখাই মানবাধিকার। মানবাধিকার একটি বিশদ ও সামগ্রিক বিষয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, একবিংশ শতাব্দীতে ও বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির যুগেও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় প্রতিনিয়ত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে একটি গণমুখী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে নিয়মিত গণশুনানি আয়োজন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উপস্থাপন, প্রতিবেদন দাখিল, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানবাধিকার বিষয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ প্রেরণ; মানবাধিকার বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন জেলার কমিটির সাথে মতবিনিময় সভা আয়োজন, শিশুর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধে কার্যক্রম গ্রহণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর এদেশে মানবাধিকার বলে আর কিছু ছিলো না। সেই কালরাতে আমাদের পরিবারের ১৮জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনিদের যাতে কেউ বিচার করতে না পারে সেজন্য দায়মুক্তি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে আমাদের স্বজনদের হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পূর্বে আমরা এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে মামলা করতে পারিনি। সরকার গঠনের পর সেই কালো আইন বাতিল করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমরাই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এরপর থেকে আমরা সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের ব্যবস্থা করেছি। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ পালন করা হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে বিশ্বের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

রাজনৈতিক, সামাজিক মানবাধিকার সংগঠন দিবসটি পালন করে থাকে। জাতীয় স্থানীয় প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব বহন করে দিবস সম্পর্কে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। দিবসের গুরুত্ব সমস্যা সম্ভাবনা এবং মানবাধিকারের বাস্তবায়ন দাবি করে সভা সমাবেশ, র‌্যালি আয়োজন করে থাকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

মানবাধিকার দিবসের তাৎপর্য বলে শেষ করা যাবে না। দুনিয়ার নানা দেশে অসংখ্য মানবজাতি গোত্র তাদের সামাজিক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ যে বঞ্চিত না হন সে উদ্দেশ্যেই এই দিবস । বিশ্বব্যাপী আজকের এই সময়ে ফিলিস্তিনিদের মতো কোথাও না কোথাও মানবজাতি তার নাগরিক ও মৌলিক রাষ্ট্রীয় অধিকারের জন্য যুদ্ধ সংগ্রাম আত্মাহুতি দিচ্ছে। মানবতা নীরবে নিভৃতে ক্রন্দন করছে। মানবকল্যাণ এবং শান্তিময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব নেতাদের একযোগে কাজ করার মাধ্যমে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস সফল হবে বলেই বিশ্বাস।

জাতীয়-এর আরও খবর