ঠাঁই নেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে

  বিশেষ প্রতিনিধি    14-02-2023    249
ঠাঁই নেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে

শীতের বিদায় ঘণ্টা বাজছে। আর মাত্র মাসখানেকের মধ্যে গ্রীষ্ম হাজির হবে তার প্রচণ্ডতা নিয়ে। তাই তো শীতের আরামদায়ক শেষ কয়েক দিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করছেন পর্যটকরা। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ভিড় জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা। সব মিলিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে পর্যটকের তিলধারণের জায়গা নেই। লাখ পর্যটকের ভিড়ে জমজমাট কক্সবাজার।

গতকাল সাপ্তাহিক ছুটিকে ঘিরে কক্সবাজার সৈকতে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। শুক্র-শনিবারের ছুটিকে কাজে লাগাতে ভ্রমণেচ্ছু মানুষেরা এখানে ভিড় করেছে। তাদের অনেকেই আগাম বুকিং নিয়েছেন হোটেল, মোটেল ও কটেজগুলোয়। ব্যয়বহুল জেনেও অনেকে আগাম টিকিট কেটেছেন। সেন্ট মার্টিনেও এবার আগাম কিছু বুকিং পেয়েছেন সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।

গতকাল বিকালে কক্সবাজার শহরের সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা থেকে আগত শতাধিক পর্যটক। সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও তারা রুম পাননি। হোসেন ও আরমান নামের দুই পর্যটক বলেন, ‘আমরা ঢাকার সাভারের প্রায় ৪০ জনের একটি গ্রুপ বাস ভাড়া নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। আসার সময়ও রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছি। আবার এখানে এসে দেখি কোনো হোটেলে রুম নেই।’ বরিশাল থেকে আসা নুর কলিম রানা বলেন, ‘সকালে বাস থেকে কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে নেমেছি। এরপর কলাতলী নামক একটি রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা করতে গিয়ে দেখি সেখানেও পা রাখার জায়গা নেই। পরে পাশের একটি রেস্তোরাঁয় এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করে নাশতা করেছি। এরপর রুম খুঁজতে যে হোটেলেই যাই সবার একটি কথা—রুম খালি নেই।’

সেন্ট মার্টিনেও পর্যটকদের ভিড় রয়েছে বলে জানা যায়। হোটেল সী প্রবালের পরিচালক আব্দুল মালেক জানান, কয়েকদিন ধরেই দ্বীপে পর্যটক বেড়েছে। অনেককেই রুম দিতে পারছেন না। হোটেল দ্য প্রেসিডেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘আমার হোটেলে ৫০টি রুম আছে। সব এক সপ্তাহ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য আসছেন। অনেককে না করতে হয়েছে।’

সাপ্তাহিক ছুটিকে ঘিরে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন প্রায় ৩ লাখ পর্যটক। শহরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। এ সম্পর্কে ট্যুর অপারেটর সমিতির সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘ছুটিতে কক্সবাজারের ৪৫০টি হোটেলের সব বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অনলাইনে রুম চাইলেও তাদের দিতে পারছি না।’

গতকাল কক্সবাজারের লাবণী, সী-গাল, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্ট থেকে দেড় কিলোমিটার সৈকতজুড়ে পর্যটকের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। পর্যটকরা দল বেঁধে সাগরের নীল জলরাশি উপভোগ করছেন। অনেকে আবার সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরছেন কিংবা ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছবি তুলে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকদের দায়িত্বে নিয়োজিত সেফগার্ড কর্মী সাদেক হোসাইন বলেন, ‘কাল থেকে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের চাপ বেশি, যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এত মানুষ সমুদ্রসৈকতে নেমে যায় আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন কষ্ট হয়ে পড়ে।’

কক্সবাজারে বর্তমানে লাখের বেশি পর্যটক রয়েছে। কমপক্ষে চার হাজার পর্যটক গতকাল সেন্ট মার্টিন গেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোয় তাদের সদস্যরা তত্পর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের সুপার মো. জিল্লুর রহমান।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা মাঠে আছি। যেখানে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অভিযান চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।’

শীতের শেষ মৌসুমে পর্যটকরা কক্সবাজারে ছুটে আসছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে মাঠে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মুহম্মদ শাহিন ইমরান।

পর্যটন-এর আরও খবর