অতিরিক্ত সময়ে ভাঙলো হৃদয়, থামলো স্বপ্নযাত্রা

  বিশেষ প্রতিনিধি    02-07-2023    95
অতিরিক্ত সময়ে ভাঙলো হৃদয়, থামলো স্বপ্নযাত্রা

কুয়েতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে হৃদয় ভাঙলো বাংলাদেশের, থামলো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এবারের আসরে বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা।

১৪ বছর পর সেমিফাইনালে উঠে মোরসালিন-রাকিবরা স্বপ্ন দেখছিল ১৮ বছর পর ফাইনালে ওঠার। সেই স্বপ্নের পালে দারুণ হাওয়া দিয়েছিল সেমিফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কিন্তু গোল মিসের মহড়া আর ক্লান্তির কাছে হার মানলো বাংলাদেশ। অতিরিক্ত সময়েরও যোগ করা সময়ে (১০৫+২ মি.) গোল হজম করে বাংলাদেশ।

এ সময় কুয়েতের আল ব্লোউসি ডি বক্সের সামনে বল পেয়ে সামনে উঠে গিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ান। এই ম্যাচে দুর্দান্ত সব সেভ দিয়ে ১০৫ মিনিট পর্যন্ত বাংলাদেশের জাল অক্ষত রাখা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।

এরপর অবশ্য গোল শোধে মরিয়া হয়ে খেলছির হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। দুটি সুযোগও তৈরি করেছিল। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। তাতে ফাইনালে ওঠাও হয়নি। সেমিফাইনাল হেরে বিদায় নিতে হয় লাল-সবুজের জার্সিধারীদের।

অবশ্য হারলেও হৃদয় জিতেছে তারা। র‌্যাংকিংয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে জামাল-তপুরা যেভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন সেটা প্রশংসার দাবি রাখে।

ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ এদিন শুরু থেকেই বেশ উজ্জীবিত ফুটবল খেলে। তাতে ম্যাচের শুরুতেই পেয়ে যায় গোলের সুযোগ। দ্বিতীয় মিনিটেই ডানদিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন রাকিব হোসেন। তিনি বাড়িয়ে দেন ডি বক্সের মধ্যে থাকা মোরসালিনকে। বল পেয়ে যান মোরসালিন। তার সামনে ছিলেন কেবল কুয়েতের গোলরক্ষক আব্দুলরহমান। তাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি আগের দুই ম্যাচের তারকা। তিনি সরাসরি মেরে দেন গোলরক্ষের পায়ে। আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজের মতো উরু দিয়ে বল ঠেকিয়ে দেন আব্দুলরহমান। গোল বঞ্চিত হন মোরসালিন।

সপ্তম মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল কুয়েতও। এ সময় জটলার মধ্য থেকে নেওয়া শট গোললাইনের সামনে থেকে ক্লিয়ার করেন বাংলাদেশের ঈসা ফয়সাল।

এরপর ৩১ মিনিটের মাথায় বাংলাদেশ আরও একটি সুযোগ তৈরি করেছিল। এ সময় বামদিক থেকে রাকিবকে উদ্দেশ্য করে মোরসালিন বল বাড়িয়ে দেন ডি বক্সের মধ্যে। কিন্তু কুয়েতের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা রাকিবকে শট নেওয়ার সুযোগ দেননি। রাকিব সুযোগ পেলে হয়তো গোলের দেখা পেয়েও যেতে পারতেন।

এভাবে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে গোলশূন্যভাবে শেষ হয় প্রথমার্ধের লড়াই।

বিরতির পর পরই ডি বক্সের বাইরে থেকে আচানক শট নেন রাকিব। সেটি ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে উড়ে যায়। এরপর ৬১ মিনিটের মাথায় জিরো ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল থেকে রাকিব আরও একটি শট নেন। শটে তিনি গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলটি ক্রসবারে লেগে বাইরে চলে যায়। ৭২ মিনিটে আরও একটি দারুণ সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি তারা।

৮৭ মিনিটে আরও একটি দারুণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। এ সময় ডানদিক থেকে ইব্রাহিমের বাড়ানো ক্রসে রাকিব কোনোরকমে মাথা লাগতে পারলেই গোল হতে পারতো। কিন্তু তিনি সেটি করতে পারেননি।

এই অর্ধে কুয়েত অবশ্য দারুণভাবে চাপে রাখে বাংলাদেশকে। মুহুর্মুহু আক্রমণে আনিসুর রহমান জিকোকে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলেন। অবশ্য কুয়েতের খেলোয়াড়দের নেওয়া দারুণ দারুণ শটগুলো দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন জিকো। তাতে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়েও লড়াই থামায়নি ক্লান্ত বাংলাদেশ। কিন্তু কুয়েতের খেলোয়াড়দের আক্রমণের মুখে সেরাটা দিতে পারছিল না। সেই সুযোগে ১০৫+২ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে নেন কুয়েতের আল ব্লোউসি। তার গোলটিই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেয়। প্রথমবার খেলতে এসেই ফাইনালে তুলে তার দলকে। আর ছিটকে দেয় ১৮ বছর পর ফাইনালে খেলার স্বপ্নজাল বোনা বাংলাদেশকে।

খেলাধুলা-এর আরও খবর