পুতিনকে বাগে আনতে এবার পশ্চিমাদের ‘শি কার্ড’

  বিশেষ প্রতিনিধি    07-04-2023    168
পুতিনকে বাগে আনতে এবার পশ্চিমাদের ‘শি কার্ড’

১৪ মাস ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ। পরাশক্তির যুদ্ধ যে বিশ্বকে নাড়িয়ে দিতে পারে সেটি আর বুঝতে বাকি নেই। গোটা বিশ্বের অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। এই যুদ্ধ কখন শেষ হবে সেটি অনেকটাই নির্ভর করছে রাশিয়ার ‘একনায়ক’ ভ্লাদিমির পুতিনের মর্জির ওপর। এখনো পর্যন্ত রুশ প্রেসিডেন্টের যে মনস্তত্ব তাতে অনুমান করা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি মনে না করবেন যে যুদ্ধ তার পক্ষে এসেছে কিংবা তার টার্গেট পূরণ হয়েছে ততক্ষণ তিনি থামবেন না। তিনি মূলত পশ্চিমাদের শায়েস্তা করার নজির হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধকে যেন বিশ্ববাসী মনে রাখে সেই প্রচেষ্টায় লিপ্ত।

‘একরোখা’ ভ্লাদিমির পুতিনকে দমানোর কোনো পশ্চিমা টোটকা এখনো পর্যন্ত কাজে আসেনি। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা, নিন্দা, কূটনীতিক ডেকে শাসানো কোনো কিছুতেই তোয়াক্কা করছেন না পুতিন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের দূতিয়ালি করে সফল হননি। এবার পুতিনকে দমাতে ‘শি জিনপিং’ ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করতে চাইছে পশ্চিমারা। এরদোগানের মতো শিরও পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান উরসুল ভন ডের লিয়েনের বৈঠক হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে ইইউ প্রধান বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপে আগ্রহী চীনের প্রেসিডেন্ট। রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলতেও শি জিনপিংকে অনুরোধ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।

বেইজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন ইইউ প্রধান ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তাদের এই বৈঠকের প্রতি নজর ছিল বিশ্বের। ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউক্রেনের সংকট অবসান এবং বৈশ্বিক শক্তিকে বিভক্ত করে দেওয়ার মতো সর্পিল উত্তেজনা নিরসনে সহযোগিতার জন্য পশ্চিমাদের উচিত চীনের সঙ্গে কাজ করা।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাতের অবসানে শি জিনপিং নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরছেন। তবে পশ্চিমারা তাকে রুশ সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। ম্যাক্রোঁর মন্তব্যের জবাবে শি আশা করেন মস্কো ও কিয়েভ যতদ্রুত সম্ভব শান্তি আলোচনা শুরু করবে।

ইইউ প্রধান বলেন, জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলতে চীনা প্রেসিডেন্টের আগ্রহ প্রকাশের কথা পুনরায় শুনতে পাওয়া ইতিবাচক। এর জবাবে শি বলেন, উপযুক্ত পরিস্থিতি ও সময়ে এই আলোচনা হতে পারে।

জেলেনস্কি একাধিকবার চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাওয়ার কথা বলেছেন। এমনকি চীনা প্রেসিডেন্ট গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরও এই কথা বলেন।

এ বিষয় ম্যাক্রোঁ শিকে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ বিশ্বের স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে। যুদ্ধ থেকে রাশিয়াকে ফিরিয়ে আনতে এবং সবাইকে আলোচনার টেবিলে বসাতে আমরা আপনার ওপর ভরসা করতে পারি।

ইউক্রেন সংকট অবসানের জন্য চীন ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। এতে উভয়পক্ষকে ধীরে ধীরে উত্তেজনা কমিয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার নিন্দা না করায় পশ্চিমারা চীনের এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ওই সময় বলেছিল রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের কথা বিবেচনা করছে চীন। তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বেইজিং।

ফরাসি কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ না করতে শির প্রতি অনুরোধ করেছেন ম্যাক্রোঁ। জবাবে শি বলেন, এটি চীনের যুদ্ধ নয়।

বৈঠক শেষে চীনা প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন ও রাশিয়াকে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু এবং সংঘাতের একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফ্রান্সের পক্ষ থেকে শি ও ম্যাক্রোঁর আলোচনা ‘খোলামেলা ও গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর চীন দুই নেতার বৈঠককে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ ও ‘গভীর’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধি না করার আন্তর্জাতিক আইন যাতে রাশিয়া মেনে চলে সে জন্য চাপ দিতে শির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। পুতিন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিবেশী বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করবে রাশিয়া। এ ঘোষণাকে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের বিপজ্জনক তীব্রতা বৃদ্ধি হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

শি বলেন, ‘সব দেশের উচিত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করা উচিত না’। তবে তিনি রাশিয়ার কথা উল্লেখ করেননি।

সূত্র: রয়টার্স।

আন্তর্জাতিক-এর আরও খবর