ঐতিহাসিক মারদেকা স্কোয়ারে পালিত হবে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা দিবস

  বিশেষ প্রতিনিধি    29-08-2022    170
ঐতিহাসিক মারদেকা স্কোয়ারে পালিত হবে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা দিবস

আগামী ৩১ আগস্ট মালয়েশিয়া পা রাখছে স্বাধীনতা লাভের ৬৫তম বার্ষিকীতে। আর তাদের এবারের স্লোগান- ‘কেলুয়ার্গা মালয়েশিয়া তেগুহ বেরসামা’ (অর্থাৎ- সবাই মিলে গড়বো দেশ)। ৩১ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ঐতিহাসিক দাতারান মারদেকা স্কোয়ারে (স্বাধীনতা চত্বর) প্রায় ৫০ হাজার লোকের উপস্থিতিতে পালিত হবে দিবসটি। এ উপলক্ষে দাতারান মারদেকা স্কোয়ারের আশপাশের কয়েকটি সড়ক ও কিছুস্থান সাময়িক বন্ধ রেখে এক সপ্তাহ ধরে চলছে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ প্রশিক্ষণ, অধিবেশন ও মহড়া। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। এরই মধ্যে প্রাক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন বলে জানিয়েছেন, যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি-জেনারেল দাতুক সেরি মোহাম্মদ মেন্টেক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাতীয় দিবস অনুষ্ঠানে ইয়াং ডি-পার্টুয়ান আগাং আল-সুলতান আবদুল্লাহ রিয়াতউদ্দিন আল-মুস্তফা বিল্লাহ শাহ এবং রাজা পেরমাইসুরি আগোং টুঙ্কু হাজাহ আজিজাহ আমিনাহ মাইমুনা ইস্কান্দারিয়া মেনারা ডিবিকেএল থেকে একটি ঘোড়ায় টানা গাড়িতে আগমন করবেন। ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহংকারের দিন এটি। পৃথিবীর মানচিত্রে নিজস্ব ভূখন্ড নিয়ে মালয় জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল এই দিনে। গত দুই বছর মহামারি করোনার বিধি-নিষেধে স্বাধীনতা দিবসে জমকালো আয়োজন না থাকলেও এ বছর দিবসটি উদযাপনে রাজধানী শহরসহ রাজ্য জুড়ে সাজ সাজ রব। শহর, গ্রাম, আর অলিগলি সাজানো হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন নীল, লাল, সাদা আর হলুদের সংমিশ্রণে তৈরি মালয়েশিয়ান পতাকায়। প্রতিটি স্থাপনায় শোভা পাচ্ছে মালয়েশিয়ান পতাকা। এ দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে নানা অফার। প্রশাসনের পাশাপাশি জন সাধারণের মধ্যেও দিবসের উৎসবের কোন কমতি নেই। স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে রাজধানী কুয়ালালামপুরও ছেয়ে গেছে পতাকা সংবলিত নানা রকম ব্যানার ও ফেস্টুনে। মালয়েশিয়ার অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত মুক্ত। গত ৩০ বছরে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে মালয়েশিয়া একটি উঠতি শিল্প উন্নত বাজার অর্থনীতি বলে বিবেচিত। বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। করোনা পরবর্তী মালয়েশিয়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানব সম্পদ উন্নয়ন করতে মালয়েশিয়া বদ্ধপরিকর। আন্তর্জাতিক মানদন্ড রক্ষা করতে এরই মধ্যে কর্মীদের কল্যাণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বেতন ভাতা বৃদ্ধি বীমাসহ নিরাপত্তা ও বিদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে শূন্য অভিবাসনের দিকে ধাবিত হবার লক্ষণ স্পষ্ট। এখানে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় কারিগরি শিক্ষায়। দেশীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস করেছে ফলে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী আছে। চিকিৎসা শিক্ষায় অনেক উন্নতি করেছে। বর্তমান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। ক্ষমতার পালাবদল থাকলেও মালয়েশিয়ার উন্নয়নে ধারাবাহিকতা চলে আসছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি মালয়েশিয়াই সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রা তখন থেকেই। এরপর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়া সফরে গেলে দু’দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। ১৯৭৬ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী আসতে শুরু করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শ্রম, শিক্ষা, সামরিক, সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভিত্তি শক্তিশালী হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মালয়েশিয়া এখন বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্যঅংশীদার। ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৭.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১১-১২ সালে ছিল মাত্র ৫৬.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশে হাউজিং, টেলিকম, পাওয়ার প্লান্ট এবং ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে মালয়েশিয়া বিনিয়োগ করেছে, যার পরিমাণ ৮১৫.৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য উভয় দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সফরের পর বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার শ্রম সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে নবমাত্রা পেয়েছে। এরপর ২০১৬ সালে বাংলাদেশকে লেবার সোর্স কান্ট্রির স্বীকৃতি দিয়েছে দেশটি। এরপর জিটুজি প্লাস চুক্তি করে যার আওতায় তিন লাখ বাংলাদেশির নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। গত ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যকার চুক্তি সই হয় নতুন কর্মী নিয়োগের। বাংলাদেশ থেকে নতুনকর্মী আসা শুরু হয়েছে। আগামী ৫ বছরে প্রায় ৫ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। অন্য দিকে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে চলা রিক্যালিব্রেসি প্রোগ্রামের আওতায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি বৈধতা ও কাজ পায়, অন্যথায় এদের খালি হাতে দেশে ফিরে যেতে হত। বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের নিজ দেশে ফিরে যাবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেশে ফিরে যাবার সুযোগ দিয়েছে। গত করোনা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার সরকার এই প্রথম বিদেশি কর্মীকে একই সেক্টরে মালিক পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে। উন্নত মালয়েশিয়া বিনির্মাণে বাংলাদেশি কর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। আগামীতে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা বাংলাদেশ সরকারের।

আন্তর্জাতিক-এর আরও খবর