ইলিশে সয়লাব মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-11-2022    151
ইলিশে সয়লাব মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

৭ দিনে অবতরণ হয়েছে ২৫০ মেট্রিক টন ইলিশ

সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে উপকূলে ফিরছে জেলেরা। যার কারণে ইলিশে সয়লাব কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। ইলিশ রাখার স্থান না পেয়ে রাখা হচ্ছে খোলা মাঠে।

তবে মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি; নিষেধাজ্ঞার সুফল মিললেও অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়ন না হওয়ায় অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে মাছ। আর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গেলো বছরের তুলনায় এবছর দ্বিগুণ ইলিশ অবতরণ হয়েছে কেন্দ্রে।

মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীতে দেখা যায় শতাধিক মাছ ধরার বড় বড় ট্রলার নোঙর করা। নোঙর করা এসব ট্রলারের পাশে অবস্থান করছে অসংখ্য ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। বড় ট্রলার থেকে ডিঙি নৌকায় নামানো হচ্ছে শত শত ইলিশ। এসব ইলিশ নিয়ে দ্রুত ঘাটে ভিড়ছে ডিঙি নৌকাগুলো। আর একের পর এক ইলিশ ঝুঁড়ি ভর্তি করে নামানো হচ্ছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।

ঘাটে ইলিশ নামতেই শুরু হয় তুমুল হাঁকডাক। জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের দর কষাকষির পরই শ্রমিকরা ইলিশগুলো ঘাট থেকে নিয়ে রাখছেন অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুনে। জেলেরা বলছেন; সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ।

এফবি ছাইদা ট্রলারের জেলে শফিক বলেন, সাগরে গিয়ে গেলো ৭ দিন জাল ফেলেছি। জাল ফেলতেই ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়েছে ইলিশ। প্রায় ৪ হাজার ইলিশ নিয়ে অবতরণ কেন্দ্রের বিক্রি করার জন্য এসেছি। এখন দ্রুত এসব ইলিশ বিক্রি করে পুনরায় ট্রলারে মালামাল নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যাব।

এফবি আল্লাহ দান ট্রলারের জেলে ছৈয়দ আলম বলেন, সাগরে ইলিশ ধরা পড়ায় আমরা খুবই খুশি। আবারো সাগরে যাচ্ছি ৭ দিনের জন্য। আশা করি, আরো বেশি ইলিশ ধরা পড়বে। কারণ সাগরে ভরপুর ইলিশ রয়েছে।

আরেক জেলে ইব্রাহীম বলেন, সাগরে ১০ দিন জালে ফেলে ৫ হাজার ইলিশ পেয়েছি। এখন এসব ইলিশ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে সাড়ে ৮টা লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। খরচ হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা, আর লাভ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। আল্লাহ’র কাছে লাখো শোকরিয়া। সাগরে ইলিশ ধরা পড়লেই খুবই আনন্দ লাগে।

ট্রলার মালিক হাশেম বলেন, “সাগরে মাছ শিকার করে যেসব ট্রলার উপকূলে ফিরছে, প্রতিটি ট্রলারে ভরপুর ইলিশ পেয়েছে। আমার ৩টি ট্রলারে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছি। এখন লোকসান অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাল্লাহ।”

অবতরণ কেন্দ্রের ৩টি পল্টুন ইলিশে সয়লাব। স্তুপ করে রাখার পরও স্থান না পেয়ে রাখা হচ্ছে খোলা মাঠে। তবে বেশি ইলিশ অবতরণ হওয়ায় দাম কিছুটা কমলেও স্বস্তিতে নেই মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি; খোলা মাঠে ইলিশ রাখায় অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে তাদের মাছ।

মৎস্য ব্যবসায়ী ছৈয়দ হোসেন বলেন, সরকারি বন্ধের কারণে সাগরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে অবতরণ কেন্দ্রে বেশি ইলিশ অবতরণ হওয়ায় মাছের দাম কিছুটা কমেছে।

কক্সবাজার অবতরণ কেন্দ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতি লিমিটেড’র সভাপতি ওসমান গণি টুলু বলেন, সাগর মাছ শিকার শেষে প্রতিদিনই ৫০ থেকে ৬০টি ট্রলার অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে আসছে। কিন্তু একটি জেটি হওয়ার কারণে মাছ নামাতে পারছে না। অনেকেই অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বড় ট্রলার থেকে ছোট নৌকায় মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড়ছে। আর অবতরণ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পল্টুন নেই। যার কারণে মাছ রাখার স্থান পাওয়া যায় না। অনেক সময় মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই, অবতরণ কেন্দ্রটি যদি আধুনিক, কয়েকটি জেটি ও কয়েকটি পল্টুন বাড়ানো হয় তাহলে সবাই উপকৃত হবে।

তবে অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বলছেন, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গেলো বছরের তুলনায় এবছর দ্বিগুণ ইলিশ অবতরণ হচ্ছে কেন্দ্রে।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. বদরুদ্দৌজা বলেন, সরকারি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষের পর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩’শ মেট্রিক টনের অধিক সামুদ্রিক মাছ অবতরণ কেন্দ্রে অবতরণ হয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র ইলিশ রয়েছে ২’শ ৫০ মেট্রিক টন। গতবছর এসময়ে যে পরিমাণ মাছ অবতরণ হয়েছিল, তার চেয়ে দ্বিগুণ মাছ এবার অবতরণ কেন্দ্রে অবতরণ হয়েছে। এতে বুঝা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। যার সুফল এখন জেলে থেকে শুরু করে সবাই পাচ্ছে।

ব্যবস্থাপক মো. বদরুদ্দৌজা আরও বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেটি এবং পল্টুন এরই মধ্যে সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। তবে, আগামী বছর থেকে জাইকা কাজ শুরু করছে। তারা মৎস্য অবতরণ আধুনিকায়নের পাশাপাশি ২টি জেটি ও অনেকগুলো শেড নির্মাণ করবে। ফলে সব সমস্যার সমাধান ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।

সারাদেশ-এর আরও খবর