মুক্তিপণে ফিরল তিন কৃষক

বর্বর ও মধ্যযুগীয় নির্যাতন

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-01-2023    230
মুক্তিপণে ফিরল তিন কৃষক

মুক্তিপণে ফিরল তিন কৃষক বর্বর ও মধ্যযুগীয় নির্যাতন

১০ লাখ টাকা দাবিতে আটকে রেখেছে আরেকজনকে

কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ের ভেতর ভুট্টা ক্ষেত থেকে অপহরণের তিন দিন পর অপহৃত চার কৃষকের মধ্যে তিনজন ফিরে এসেছেন। সাড়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে সশস্ত্র দলের কবল থেকে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে বাড়িতে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। ফিরে আসা ভিকটিম আব্দুর রহমান জানান, প্রতিদিনের মতো তারা ভুট্টাখেতে কাজ শেষ করার পর পাহাড়ের টং ঘরে বিশ্রাম করছিলেন। এসময় ১৫/২০ জনের একটি সশস্ত্র দল অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। এসময় চোখ বেঁধে পাহাড়ের ভেতর তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়। সেখানেও চোখ বেঁধে রেখে দিনরাত টাকার জন্য নির্যাতন করত। অপহৃত চারজনের মধ্যে আব্দুস সালামকে সবচেয়ে বর্বর ও মধ্যযুগীয় নির্যাতন করা হয়েছে।

তাদের কাছে দাবি করা হয় জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা। সেখানে আব্দুস সালামের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায় করার জন্য তাকে অপহরণকারীরা রেখে দিয়েছে।

আব্দুর রহমান আরও জানান, পুলিশ প্রথম দিন পাহাড়ে অভিযানে যাওয়ায় তাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। তাছাড়া তার স্ত্রী হামিদা বেগম সাংবাদিকদের কাছে তথ্য দেয়ায় তার উপর আরও নির্যাতনের মাত্রা বাড়ায় অপহরণকারীরা।

ফিরে আসা অপহৃত ভিকটিমরা বলেন- অপহরণকারীদের কাছে রয়েছে দামি মোবাইল সেট ও ল্যাপটপ। আমাদের উদ্ধারের বিষয়ে কী করে সব তথ্য তারা মুহূর্তে জানতে পারে। প্রাণে বাঁচতেই অপহরণকারী সদস্যদের পায়ে ধরে অনুনয়-বিনয় করে বুঝিয়ে তিনজনে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে তাদের কবল থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি।

ভিকটিম মুহিবউল্লাহ জানান, অপহরণকারীদের হাত থেকে মুক্ত হতে তার পরিবার আশপাশের মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে এবং স্বর্ণ ও বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে মুক্তিপণ যোগান দিয়েছে। ডাকাতদলের নির্যাতনে তার হাত পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, ফিরে আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দিলে তাদেরকে পুনরায় অপহরণ করে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে অপহরণকারীরা।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি (শনিবার) রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড লেচুয়াপ্রাং পাহাড়ের ভেতর থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। প্রতিদিনের মত চার কৃষক ভুট্টা, ধান ও শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদের কাজ করে বিশ্রামে ছিলেন। পাহাড়ি হাতি তাড়াতে রাত জেগে পাহারা দিতে তারা ক্ষেত এলাকায় রাতে অবস্থানকালে সশস্ত্রগ্রুপ অস্ত্রের মুখে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর বড় লেচুয়াপ্রাং মৃত আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুস সালাম (৪৮), একই এলাকার ছৈয়দ হোসেন প্রকাশ গুরা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান (৪৫), রাজা মিয়ার ছেলে মুহিব উল্লাহ (১৫) ও ফজল করিমের ছেলে আব্দুল হাকিমকে (৪২) পাহারা ঘর থেকে অপহরণ করে।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. আব্দুল হালিম জানান, চার কৃষকের মাঝে তিনজন অপহরণকারীদলের কবল থেকে ফিরে এসেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছি।

অপরজনকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অপহৃত ভিকটিমের পরিবার থেকে এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ থানায় দেয়নি। তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন ওসি।

অন্যদিকে, কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের অভিযানেই অপহৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। র‌্যাব-১৫, কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, চার কৃষক অপহরণের খবর জেনে মঙ্গলবার টেকনাফের হ্নীলা পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত তিন ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় Rab১৫ এর সদস্যরা।

৭ জানুয়ারি রাতে অপহরণের পর থেকে ভিকটিমদের পরিবারের কাছে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে অপহৃতদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়।

সারাদেশ-এর আরও খবর