মহেশখালীতে পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসা পানিতে গ্যাস ছিলো না

  বিশেষ প্রতিনিধি    10-02-2023    224
মহেশখালীতে পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসা পানিতে গ্যাস ছিলো না

মহেশখালীতে ধান চাষের সেচের গভীর নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে নলকূপের পাইপ দিয়ে প্রচণ্ড বেগে পানি বেরিয়ে আসার ঘটনা ঘটেছে। এটি ভূগর্ভস্থ গ্যাসের কারণে হচ্ছে কি না- এনিয়ে গত দুই দিন ধরে উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অবশেষে এই পানির ফোয়ারা সৃষ্টির প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর ভূগর্ভ থেকে পানির এই উদ্‌গীরণ নিজ থেকে বন্ধ হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- এটি গ্যাস নয়- বরং ভূগর্ভে পানির অতিচাপের কারণে এমনটি হয়ে ভূপৃষ্ঠে পানিই বেরিয়ে এসেছে।

জানা গেছে- গত ৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সন্ধ্যা থেকে গভীর নলকূপের পাইপ লাইন দিয়ে অতিবেগে এই পানির ফোয়ারা সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- ওই দিন মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহির পাড়া এলাকার এক ব্যক্তি তার বাড়ির উঠানে গভীর নলকূপের পাইপ স্থাপন করেন। মূলতঃ বোরো মৌসুমে ধান চাষে সেচ দেওয়ার জন্যেই এই নলকূপটি স্থাপন করা হচ্ছিল।

দিনভর কাজ করে স্থানীয় নলকূপ মিস্ত্রিগণ ৩শ ২০ ফুট গভীরতায় এ পাইপটি স্থাপন করে চলে যায়, পরদিন এই পাইপ এর সাথে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প স্থাপন করার কথা ছিলো। সন্ধ্যায় নলকূপ মিস্ত্রিগণ চলে যাওয়ার পর হঠাত্ বিকট শব্দে পাইপ লাইন দিয়ে পানি বেরিয়ে আসতে থাকে।

এ অবস্থা চলে টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত। এ নিয়ে এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়। ভূগর্ভ থেকে গ্যাস বেরিয়ে আসছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। স্থানীয়রা এ নিয়ে কিছুটা আতংকিতও হয়ে পড়ে। এর আগেও বিভিন্ন সময় ওই এলাকায় গভীর নলকূপ বসাতে গিয়ে গ্যাস বেরিয়ে এসে তাতে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো।

পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর মহেশখালী স্টেশনের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ওই দলটি পানির এই উদ্‌গীরণ বন্ধ করতে না পেরে এবং এটিকে গ্যাস বিবেচনা করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে মহেশখালীর মহেশখালীর এলএনজি স্টেশন থেকে জিটিসিএল এর আরও একটি দল গিয়ে যুক্ত হয় ওখানে। তারা বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণে রেখে ওই বাড়ি থেকে লোকজনকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেন। জিটিসিএল এর ওই দলটি পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসা পদার্থে আগুন ধরে যাওয়ার আশংকা থেকে ওই এলাকায় লোকজনকে না যাওয়ার পরার্মশ দেন এবং তারা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চান। পরে মহেশখালী থানা থেকে পুলিশের একটি দল গিয়ে ওই এলাকায় পাহারা বসায়।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এর মহেশখালী’র ব্যবস্থাপক ও প্রকৌশলী শংকরদাশ গুপ্ত এমন তথ্য নিশ্চিত করে দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন- বিষয়টি পরে বাপেক্স তত্বাবধানে দেখভাল করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিঃ (বাপেক্স) এর এক কর্মকর্তা নাম ও পদবী প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন- খবর পাওয়ার পরই বাপেক্স এর একটি দল মহেশখালীর ওই জায়গায় পৌঁছান, তারা প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটি গ্যাস নয়, পানি বলেই নিশ্চিত হন। এক পর্যায়ে তারা অধিকতর নিশ্চয়তার প্রয়োজনে ঢাকায় উন্নত পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে পানির গতি বেশী থাকায় এবং নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় তারা তাৎক্ষনিক ভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে পারেনি। পরে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানোর উদ্যোগ নিলে এরই মধ্যে পানির উদ্‌গীরণ বন্ধ হয়ে যায়।

বাপেক্স এর এই প্রকৌশলী জানান- সৃষ্টির প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাত ১০টার দিকে এই পাইপ দিয়ে পানি আসা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তিনি মনে করেন মূলতঃ ভূগর্ভের ওই স্তরে পানির অতিচাপের কারণে নির্গমন পথ পেয়ে উচ্চ গতিতে এ সব পানি ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে এবং পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন ওই এলাকায় এর আগেও এভাবে নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে আরও ৩বার এমন ঘটনা ঘটেছে।

সারাদেশ-এর আরও খবর