রাত হলেই মুগ্ধতা ছড়ায় আরবের আদলে তৈরি মসজিদ

  বিশেষ প্রতিনিধি    04-04-2023    121
রাত হলেই মুগ্ধতা ছড়ায় আরবের আদলে তৈরি মসজিদ

কারুকাজে গড়া তিনটি মিনার সদৃশ ফটক। দুইপাশে দুইটি সোনালি রঙের ফোয়ারা ও মিনার। ছাদের ওপর বড় বড় দুইটি সুউচ্চ মিনার। দেখে মনে হবে যেন আরব দেশের কোনো প্রসিদ্ধ মসজিদ। তবে না, আরব দেশ নয়; ২০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে চট্টগ্রামের রাউজানে মসজিদটি নির্মাণ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইউনুস-আলমাস ফাউন্ডেশন।

উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সামমাহালদার পাড়া গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। গ্রামের নামে সঙ্গে মিলিয়ে এটির নাম রাখা হয়েছে সামমাহালদার পাড়া জামে মসজিদ।

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের কমলার দীঘি পাড়ের এক কিলোমিটার দক্ষিণে অপরূপ সাজে সজ্জিত, কারুকাজ সমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি দেখা যায় কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও। মসজিদের মাঝখানের অংশে রয়েছে একটি বড় সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে একটু ওপরে উঠলেই মুসল্লিদের জন্য সু-বিশাল নামাজের জায়গা। ওপরে আর চারপাশে রয়েছে সোনালি রঙের বড়-ছোট ঝুলন্ত ও দেয়াল বাতি। মিহরাবের ওপরে রয়েছে কালেমা খচিত লেখা।

মসজিদের সামনে ও ওপরে রয়েছে মোট নয়টি গম্বুজ। রয়েছে দুইটি সুউচ্চ মিনার, যার উচ্চতা ১০৩ ফুট। মার্বেল পাথরে করা হয়েছে মেঝে ও দেয়ালের পুরো কাজ। দরজাগুলো কাঠ ও কাচের।

মসজিদের ভেতর রয়েছে বড় বড় ছয়টি ঝাড় বাতি ও ৫৩টি ঝুলন্ত বাতি। এছাড়া দেয়ালে রয়েছে ৫৯টি বাতি। চায়না ও ইতালি থেকে আনা এসব বাতি রাতের বেলা একসঙ্গে জ্বলতে থাকলে অপরূপ হয়ে ওঠে মসজিদটির সৌন্দর্য।

মসজিদের সামনে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুইপাশে দুইটি বড় বড় পুকুর। সামনে ও পাশের পুকুরঘাটের চারপাশে দেওয়া হয়েছে সীমানা প্রাচীর। প্রাচীরের পাশে করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। এছাড়া অল্প দূরত্বে রয়েছে খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য পরিবার নিয়ে থাকার আবাসিক ফ্ল্যাট। মসজিদে চালু রয়েছে ছোট-বড় সবার জন্য নামাজ ও কোরআন শিক্ষার প্রশিক্ষণ কর্মশালা।

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে মসজিদটি নির্মাণ করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইউনুছ-আলমাস ফাউন্ডেশন। মসজিদটিতে দুই হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে প্রায় ২০০ নির্মাণ শ্রমিক দিন-রাত কাজ করেন। দোতলা বিশিষ্ট ওপর-নিচে ১৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট জায়গার মসজিদটিতে কাতার সংখ্যা ১৯টি। প্রতি কাতারে ৬০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

এছাড়া উত্তর পাশে রয়েছে নারী মুসল্লিদের জন্য আলাদা জায়গা। যেখানে হাজারের বেশি নারী মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। নিচতলার দুইপাশে রয়েছে আলাদা অজুখানা। দুইদিকে একসঙ্গে মোট ৪০ জন মুসল্লি অজু করতে পারেন। নির্মাণ কাজ শুরুর চার বছর পর ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, রাতে যখন মসজিদের চারপাশের রঙিন বাতিগুলো জ্বলে, তখন ঝলমলে আলোয় নয়নাভিরাম স্বর্গীয় আবেশ সৃষ্টি হয় মসজিদ এলাকায়। যা দেখতে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লির আগমন ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, মসজিদটির সামনে দাঁড়ালে কিংবা ভেতরে ঢুকলে মনের মধ্যে অন্যরকম এক প্রশান্তি কাজ করে। পুরোপুরি আরব দেশের মসজিদগুলোর আদলে এটি তৈরি করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এমন একটি মসজিদ তৈরি অন্যান্য অঞ্চলের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। অনেক বড় বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে, যারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে মসজিদ তৈরি করে থাকে। এটি অবশ্যই একটি ভালো দিক। এর ফলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়।

আশরাফ উদ্দিন আরো বলেন, এমন একটি মসজিদ নির্মাণ করে নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ করেছে ইউনুস-আলমাস ফাউন্ডেশন। যা যুগ যুগ ধরে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ইবাদত বন্দেগির অনুপ্রেরণা জোগাবে। মসজিদটি নির্মাণে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে ধারণা করেন স্থানীয়রা। তবে নির্মাণের ব্যয় সম্পর্কে কিছু জানাতে চান না ইউনুছ-আলমাস ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। আল্লাহর সন্তুষ্টি আর মানুষের ধর্মীয় কার্যাদি স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারার জন্য এটি নির্মিত হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

সারাদেশ-এর আরও খবর