সিত্রাং কবলে ৬২২৮ কৃষক পরিবারের স্বপ্ন ম্লান

  বিশেষ প্রতিনিধি    11-11-2022    170
সিত্রাং কবলে ৬২২৮ কৃষক পরিবারের স্বপ্ন ম্লান

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আগ্রাসনে কক্সবাজার জেলার ৬ হাজার ২২৮ কৃষক পরিবারের স্বপ্ন ম্লান হয়ে গেছে। লবণাক্ত পানিতে এসব কৃষকের সোনালী ধান, সবজি ও পানের বরজ হয়ে গেছে নষ্ট। জেলার ৮টি উপজেলায় ৫১৮ একর জমির রোপিত ধান, ৪৩ একর সবজি চাষ ও ৩২ একর জমিতে পানের বরজ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১০ কোটি বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: কবির হোসাইন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চলে যাওয়ার পর একের পর এক ক্ষতি চিহ্ন ভেসে উঠছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। জেলার ৫১৮ একর ধান লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়াও ৪৩ একর সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার। প্রায় ৩২ একর জমিতে অবস্থিত পান চাষ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানের বরজের প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৬২২৮টি।

তিনি জানান, কক্সবাজারের উখিয়া, রামুর খুনিয়াপালংয়ের গোয়ালিয়া, টেকনাফের বাহারছড়া, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উখিয়ার রেজুনদী সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, ফসলের ধান ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতির দৃশ্য। উখিয়ার জালিয়াপালংয়ের বাইজ্যাখালী প্যারা, উত্তরপাড়া, লম্বরীপাড়া সহ একাধিক স্থানে লবণাক্ত পানিতে এসব ফসল পুরোটাই লালচে হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

লম্বরীপাড়া এলাকার মীর আহমদ জানিয়েছেন, ‘আমার ১০ একর জমির মধ্যে ৫ একর ধান ও ৫ একর মৎস্য খামার ছিল। খামারের প্রচুর মাছ ছিল এবং মাঠ ভর্তি ধানের ফলন ভাল হয়েছিল। কিছুদিন পর ধানের ফসল ঘরে উঠত। কিন্তু, নিয়তি সব কেড়ে নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সেদিন রাতে অস্বাভাবিক লবণাক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খালের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে লবণাক্ত পানি ঢুকে সব তছনছ হয়ে যায়।’

একই কথা বলেছেন, ওই এলাকার ইমাম হোসেনের ছেলে আবু সৈয়দ। তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন শেষ। আমি এখন পথের ভিখারী। আমার সব ফসলি জমি নোনা জলে জ্বলে গেছে। এখন আমি কি করব। আমি সরকারের সহযোগিতা চাই।

উখিয়ার পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের ফজল আহমদের ছেলে মোক্তার মিয়া বলেন, ‘আমার গ্রামের ৬৫ একর জমির ধান লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার একটি মৎস্য ঘের সহ অন্যান্যদের ২০টি মৎম্য খামার বাঁধ ভেঙ্গে ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। এখন আমরা নি:স্ব। আমরা চাই রেজুখালের বাঁধটি মেরামত করে দিলে আগামীতে এলাকার মানুষ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে।’

শুধু এসব কৃষক নয়। তাদের মত কৃষক সৈয়দ হোসেন, আব্দুল আলম, ফরিদ আলম, আলমগীর আজিজ উল্লাহ, উত্তরপাড়ার মকবুল আহমদ, গোরামিয়া সহ ৫ হাজার কৃষি পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার।

উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম সৈয়দ আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হঠাৎ এভাবে সাগরে পানি এসে উপকূলে হানা দিবে কেউ কল্পনা করেনি। রাতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে রেজুখালের বাইজ্যাখালী প্যারা, উত্তর সোনাইছড়ি লম্বরীসহ পুরো এলাকা তলিয়ে যায়। এতে প্রাণহানি না হলেও ক্ষতি হয় কৃষকের ফসলি জমি। একারণে ঘূর্ণিঝড়ে অতিরিক্ত জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কারের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

সারাদেশ-এর আরও খবর