অপসারিত হচ্ছে জামায়াত আমীরের নামে নির্মিত কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেইট

  বিশেষ প্রতিনিধি    20-02-2023    196
অপসারিত হচ্ছে জামায়াত আমীরের নামে নির্মিত কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেইট

কক্সবাজার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রধান ফটকে সাবেক জামায়াত আমীর গোলাম আজমের নামে নির্মিত গেট অবশেষে অপসারিত হচ্ছে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শহরের এক হোটেলে মিলনায়তনে আয়োজিত কক্সবাজার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হীরক জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় উপস্থিত কক্সবাজার কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে গোলাম আজমের নামে নির্মিত গেট ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়।

হীরকজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক কক্সবাজার কলেজের সাবেক জিএস জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান এই গেট অপসারণের ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, আগামী ৪ মার্চ হীরকজয়ন্তী উদযাপনের কথা রয়েছে। এর আগেই এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের নামে স্থায়ীভাবে নির্মিত গেট ভেঙে ফেলা হবে। স্বাধীনতার মাসে একজন যুদ্ধাপরাধীর স্মৃতি চিহ্ন মুছে যাবে কক্সবাজার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গেট থেকে এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে? এমনটাই মনে করেন, কক্সবাজারের প্রগতিশীল সচেতন ছাত্র জনতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে কক্সবাজার কলেজে ইসলামী ছাত্র শিবিরের নবীনবরণ ও সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আজম। তার আগমন উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবির কক্সবাজার কলেজের প্রধান গেইট গোলাম আজমের নামের অধ্যক্ষর দিয়ে নির্মাণ করা হয় স্থায়ী পাকা এই গেট। তখন কলেজের ছাত্র সংসদসহ পুরো কলেজ নিয়ন্ত্রণ করতো ইসলামী ছাত্র শিবির।

হীরকজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ওই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ফজলুল করিম বলেন, দীর্ঘ ১৯৮০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে কলেজের নিয়ন্ত্রণ ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের হাতে। অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। দীর্ঘ ৩০ বছর ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজত্ব চলে কক্সবাজার কলেজে।

এমনকি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও কক্সবাজার কলেজের সকল কর্মকাণ্ড চলতো শিবিরের নির্দেশনায়। শিক্ষার্থী ভর্তি থেকে পাস, ফেল ও হোস্টেল বরাদ্দ সবই ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। গত ত্রিশ বছরে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের অসংখ্য নেতা কর্মী হতাহত হয় শিবিরের নির্যাতনে।

এসব হতাহতদের চিত্র তুলে ধরেন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র নেতৃবৃন্দ। তাদের একটায় দাবি ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী যারা প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে, মামলা করেছে, গাড়ি ভাঙচুর করেছে, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে হীরক জয়ন্তী উদযাপন করা সম্ভব নয়। দুষ্কৃতকারীদের বিভিন্ন উপ-কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে।

এক প্রশ্নে হীরক জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল করিম বলেন, যখন গোলাম আজমের নামে কক্সবাজার কলেজের গেইট নির্মাণ করা হয়েছিল তখন তিনি ওই কলেজের প্রফেসার ছিলেন। তখন অধ্যক্ষ ছিলেন গুরুপদ পালিত। তিনি শিবিরের চাপের মুখে বাধ্য হয়েছিলেন গোলাম আজমের নামে নির্মিত গেইটের অনুমোদন পত্রে স্বাক্ষর করতে। আমাদের ও স্বাক্ষর করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। আমি ও আরেকজন প্রফেসার স্বাক্ষর করি নাই।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ৯০-এর ছাত্র নেতা বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, কক্সবাজার কলেজের প্রধান ফটকে নির্মিত গোলাম আজমের নামে গেইট নির্মাণ বন্ধ করতে এবং নির্মাণ হওয়ার পর তা ভেঙে ফেলার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম কোনো কাজে আসেনি।

তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কক্সবাজার কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা রেজাউল করিম বলেন, শিবিরের সাবেক বর্তমান নেতাকর্মী যাদের বিরুদ্ধে রগকাটা, মানুষ হত্যা, নাশকতা মামলা, অগ্নিসংযোগ স্বাধীনতা বিরোধীচক্র ও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে তারা হীরকজয়ন্তী উৎসবে সামিল হতে পারে না।

সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিৎ দাশ বলেন, আমি কক্সবাজার কলেজের ছাত্র ছিলাম। কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল শিবির।

আমরা কলেজ ক্যাম্পাসে এসে ছাত্র রাজনীতি করতাম। এতে ও তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ ছিল আমাদের ওপর। ৮০ দশকে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে অসংখ্য নেতাকর্মীদের আহত করেছিল জামায়াত শিবির। শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সালে পাবলিক হলে যুবলীগের সম্মেলনে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তৎকালীন জেলা যুবলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী প্রয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের আহত করেছিল জামায়াত শিবির। তাদের সঙ্গে আর যাই হোক হীরকজয়ন্তী উদযাপন হতে পারে না।

দীর্ঘ ৩২ বছর পর কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মূল ফটকে থাকা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের নামের J এবং A সংযুক্ত করে নির্মিত গেইট অবশেষে অপসারিত হচ্ছে জেনে মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ছাত্র জনতা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন।

সারাদেশ-এর আরও খবর