প্রেমের টানে বাংলাদেশে জার্মান তরুণী

  বিশেষ প্রতিনিধি    21-02-2023    228
প্রেমের টানে বাংলাদেশে জার্মান তরুণী

প্রেমের টানে জার্মানি থেকে এক তরুণী এসেছেন বাংলাদেশে। ভিনদেশি ওই তরুণীর নাম জেনিফার স্ট্রায়াস। জার্মানির বাইলেফেল্ড স্টেটের জোসেফ স্ট্রায়াস ও এসাবেলা স্ট্রায়াস দম্পতির কন্যা জেনিফার। জেনিফার বাইলেফেল্ড স্টেটের একটি স্কুলে মাধ্যমিক লেভেলে লেখাপড়া করছেন।

গতকাল রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গোপালগঞ্জ আদালতে অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করেছেন গোপালগঞ্জের জেলার কাশিয়ানী উপজেলার যোতকুরা গ্রামের চয়ন ইসলামকে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভিনদেশি গৃহবধূকে দেখতে চয়নের বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকার মানুষ।

আজ সোমবার সরেজমিনে চয়নের পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, চয়নের বাবা রবিউল ইসলাম ইতালিপ্রবাসী। চয়ন তাঁর বাবার মাধ্যমে ফ্যামিলি ভিসায় ২০১৬ সালের অক্টোবরে পাড়ি জমান ইতালিতে। সেখানে কিছুদিন থাকার পরে ওই বছরের নভেম্বরে চলে যান জার্মানিতে। সেখানে গিয়ে একটি ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হন চয়ন। ভাষা শিক্ষা শেষে চাকরি শুরু করেন। পরে ২০১৮ সালে একটি স্কুলে ভর্তি হলে সেখানেই পরিচয় হয় জেনিফারের সঙ্গে। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। তাঁদের সম্পর্কের কথা উভয়ের পরিবার জানতে পারে এবং তা সাদরে গ্রহণ করে।

কিন্তু ২০২২ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ওই বছরের ১০ মার্চ বাংলাদেশে ফিরে আসেন চয়ন। দেশে এলেও জেনিফারের সঙ্গে চয়নের সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। এর একপর্যায়ে জেনিফারের প্রেমিক চয়নের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে চলে আসেন। শুক্রবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে জেনিফার নামলে বিমানবন্দরের বাইরে প্রেমিক চয়ন ও তাঁর পরিবার জেনিফারকে স্বাগত জানায়।

ওই রাতেই গাড়িযোগে জেনিফারকে নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরে চলে আসে চয়নের পরিবার। স্বামী ও শাশুড়ির সঙ্গে জার্মান তরুণী জেনিফার স্ট্রায়াস স্বামী ও শাশুড়ির সঙ্গে জার্মান তরুণী জেনিফার স্ট্রায়াস। ছবি: আজকের পত্রিকা এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতে গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জ আদালতে অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা। বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরে শহরের কাশফুল রেস্টুরেন্টে নববধূকে নিয়ে চয়নের পরিবার ও বিয়েতে আসা অতিথিদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন তাঁরা। জেনিফারের বাবা ও মা মেয়ের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি সব সময় যোগাযোগ করছেন।

জেনিফার তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘জার্মানিতে এক স্কুলে পড়া অবস্থায় চয়নকে ভালোবাসি। আমি বাংলাদেশে চয়নের কাছে চলে এসেছি। আমার ও চয়নের পরিবারের সবাই সম্মতি দিয়েছে বিয়েতে। আমি ও আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি। সারা জীবন আমি চয়নের সঙ্গে থাকতে চাই। এখানকার পরিবেশ, আতিথেয়তা ও সবার ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পরিবারের সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছে।’

জানতে চাইলে চয়ন ইসলাম বলেন, ‘আমি জার্মানিতে পড়াশোনা করার সময় জেনিফারের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে ভালোবাসা হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্ক আমাদের মাঝে। আমি একটি চাকরি করতাম। সেখানে মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হলে চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসি। আমার ভালোবাসার টানে জেনিফা বাংলাদেশে চলে এসেছে। আমরা বিয়ে করেছি। এতে আমার ও জেনিফার পরিবারের সবাই খুব খুশি।’

চয়নের ভাগনি সানজিদা আক্তার সিমি বলেন, ‘জার্মান থেকে আমাদের মামি এসেছে। সে অনেক সুন্দর। আমরা অনেক হ্যাপি।’

চয়নের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘বিদেশি বউমাকে পেয়ে আমরা সবাই খুশি। অল্প সময়েই আমাদের সবাইকে খুব আপন করে নিয়েছে। ভাবতেও পারিনি ও আমাদের সঙ্গে এত সহজে মিশে যেতে পারবে। ধুমধাম করে একমাত্র ছেলের বিয়ে দিয়েছি। জেনিফার আমার বাড়ির বউ হওয়ায় আমাদের পরিবারের সবাই খুব খুশি।

সারাদেশ-এর আরও খবর