চট্টগ্রামে বাড়ছে ম্যালেরিয়া

  বিশেষ প্রতিনিধি    13-09-2022    124
চট্টগ্রামে বাড়ছে ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া। যার মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের এক ধরনের অণুজীব; নাম তার প্রোটিস্টা। মশাবাহিত এ রোগ শুধু মানুষ নয়, ছড়ায় প্রাণীদের মাঝেও। তবে দুঃসংবাদ হলো- চট্টগ্রামে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেড়েছে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুও। চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে শুধু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৩ জন। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। অথচ আগের দুই বছরে শনাক্তের সংখ্যা ছিল মোট ৩৯ জন। মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের। জানা গেছে, হাসপাতালটিতে ২০২০ সালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এক হাজার আটজনের পরীক্ষা করে ১৩ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। পরের বছর এক হাজার ৪৬৩ জনের পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ২৬ জন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এক হাজার ২৪২ জনের পরীক্ষা করে শনাক্ত হয় ৬৩ জন। এছাড়া ম্যালেরিয়ায় ২০২০ সালে ছয়জন, ২০২১ সালে ছয়জন ও চলতি বছরের আট মাসে ৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে বান্দরবানের দুজন, রাঙামাটির একজন, কক্সবাজারের দুজন, চট্টগ্রামের তিনজন ও রংপুরের একজন রয়েছেন। সম্প্রতি রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট ২৮ চিকিৎসক-কর্মকর্তার বৈঠক হয়। বৈঠকে ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ম্যালেরিয়া রোগী ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। শুধু চমেক হাসপাতাল নয়, চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলা- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতেও বাড়ছে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ জেলায় ২০২০ সালে মোট ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয় ছয় হাজার ১০৪ জন। মারা গেছে সাতজন। পরের বছর শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাত হাজার ২০১ জনে। মৃতের সংখ্যাও বাড়ে ৯ জন। আর চলতি বছর প্রথম ছয় মাসেই শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৯০৯ জন। মারা গেছে অন্তত ১২ জন। এসব তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাদেশে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া যায় চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগের তিন পার্বত্য জেলায় রোগী বেশি, ফলে তা কমে আসছে না। পার্বত্য এলাকার জলবায়ু, জঙ্গল ও পাহাড়ি ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য ম্যালেরিয়ার মশা বিস্তারের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাই এ এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবও বেশি। তবে একটি সময় ছিল, যখন ম্যালেরিয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতো। স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান থাকায় এখন সেটি নেই বললেই চলে। সর্বপ্রথম ম্যালেরিয়ার লক্ষণসমূহের বর্ণনা দেন প্রাচীন গ্রীসের চিকিৎসক হিপোক্রেটিস, যাকে ‘ঔষধের জনক’ বলা হয়। যেখানে বছরের কোন সময় এটি হয় ও কোন জায়গায় রোগীরা বাস করে সেই তথ্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন তিনি। বলা হয়, ম্যালেরিয়ার প্রথম নথিবদ্ধ চিকিৎসা পদ্ধতির সময়কাল ১৬০০ সাল। তখন চিনচোনা গাছের তিক্ত ছালকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করত পেরুর আদিবাসীরা। ১৬৪৯ সালের দিকে ইংল্যান্ডে এটি ‘জেসুইট পাউডার’ হিসেবে পাওয়া যেত। পরে ১৮৮০ সালের দিকে চার্লস ল্যাভেরন লোহিত রক্ত কণিকা থেকে ম্যালেরিয়ার কারণ হিসেবে একটিমাত্র কোষবিশিষ্ট পরজীবী প্রোটোজোয়াকে চিহ্নিত করেন। ফলে শত বছর ধরে চলা দূষিত বায়ু সেবনের ফলে রোগ সৃষ্টির ভুল ধারণার অবসান ঘটে। ১৮৯৭ সালে ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যার রোনাল্ড রস ‘অ্যানোফিলিস মশা’ এ রোগের বাহক বলে প্রমাণ করেন। এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের কারণে ১৯০২ সালে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সারাদেশ-এর আরও খবর