কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পরিচ্ছন্ন জ্বালানী,পরিবেশ ও দক্ষতা উন্নয়নে ৭.৬ মিলিয়ন ডলার দেবে সুইডেন

  বিশেষ প্রতিনিধি    16-02-2023    217
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পরিচ্ছন্ন জ্বালানী,পরিবেশ ও দক্ষতা উন্নয়নে ৭.৬ মিলিয়ন ডলার দেবে সুইডেন

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিচ্ছন্ন জ্বালানী,পরিবেশ ও দক্ষতা উন্নয়নে ৭.৬ মিলিয়ন ডলারের দেবে সুইডেন।

১৫ ফেব্রুয়ারী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউএনএইচসিআর জানায়,কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে দু’দিনের সফর শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কর্মকান্ডের জন্য সুইডেনের পক্ষ থেকে ৭৯ মিলিয়ন ক্রোনা অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন, যা ৭.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এই অনুদানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রান্নার জন্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানী,কক্সবাজারের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের উন্নয়ন, এবং শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশীদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।

নিরাপদ জ্বালানী ও শক্তির জন্য এ সকল কর্মকান্ড জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি)-র যৌথ কার্যক্রম “সেফ এক্সেস টু ফুয়েল এন্ড এনার্জি প্লাস, ফেইজ ২” (সেফ+২) এর আওতাধীন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে বলেন, “কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী স্থানীয় বাংলাদেশীদের জীবনে সেফ+২ প্রোগ্রামের ইতিবাচক প্রভাব দেখে আমি মুগ্ধ।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের একটি প্রভাব পড়েছিল কক্সবাজারের বনভূমির একটি বড় অংশের উপর; আর সেফ+২’র মাধ্যমে বিস্ময়করভাবে শরণার্থী শিবিরগুলোর আশে-পাশের জায়গাগুলোতে পুনঃসবুজায়ন ও পুনঃবনায়ন হচ্ছে।

এই যে শরণার্থীরা এখন পরিচ্ছন্ন জ্বালানীর মাধ্যমে রান্না করছে, এর মাধ্যমে বনভূমির ও তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, আর পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশীরা দক্ষতা উন্নয়ন ও জীবিকামূলক কাজে জড়িত হচ্ছে; এটা অসাধারণ একটি অর্জন। এখানে অবদান রাখতে পেরে আমরা আনন্দিত”।

এ ব্যাপারে প্রকল্পের আহ্বায়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও বলেন, “সুইডেনের সরকার ও এর জনগণের এই অনুদানের মাধ্যমে আমরা ১ লাখ ৯০ হাজার শরণার্থী পরিবারকে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) দিতে পারবো।

এই পরিচ্ছন্ন জ্বালানী শরণার্থীদের সুস্থতা ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে; কেননা এর মাধ্যমে নিশ্বাসের সাথে কম ধোঁয়া ঢুকে, এবং এটি বনে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ও অন্যান্য সুরক্ষা ঝুঁকি রোধ করে।

এই কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের একটি সফল পুনঃবাসন হবে এবং টেকসইভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমবে”।

এলপিজি ও উন্নত জ্বালানী-বান্ধব রান্নার সরঞ্জাম বিতরণের মাধ্যমে লাকড়ির ব্যবহার ও এর সাথে গাছ কাটার পরিমাণ কমানো যায়। এই কার্যক্রমের প্রথম ধাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

পুরো প্রক্রিয়াটি আরও কার্যকরী হয় একই সময়ে গাছ লাগানো, পুনঃবনায়ন এবং ঝিরি ও পানি নিস্কাশনের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে।

এই যৌথ কার্যক্রমে পরিবেশের উন্নয়ন ও কৃষি বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণকে সাহায্য করবে।

উল্লেখ্য ২০১৯ সালে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর নেতৃত্বে শুরু হওয়া সেফ+ কার্যক্রমটিকে প্রথম থেকেই সুইডেন সহায়তা দিয়ে এসেছে। প্রথম ধাপের সফলতা ও অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ২০২২ সালের জুলাইতে এর দ্বিতীয় ধাপ সেফ+২ শুরু হয়। এই কার্যক্রমের দ্বিতীয় ধাপকে বর্তমানে সহায়তা দিচ্ছে সুইডেন ও কানাডা সরকার।

জানা যায়,প্রায় ছয় বছর আগে মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে ৭লাখ এর বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছিল, যেটিকে এখন একটি প্রলম্বিত শরণার্থী পরিস্থিতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজার এলাকার ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে আশ্রিত আছে এবং আরও ৩০ হাজার শরণার্থী বাস করছে ভাসান চরে।

সারাদেশ-এর আরও খবর